মা ক্যান্টিনের ডিম-ভাতে কলকাতা শহরে দুপুরের খাওয়া সেরেছেন প্রায় পৌনে দু’কোটি মানুষ। পুরসভার সমাজ কল্যাণ বিভাগের আধিকারিকদের আশা, খুব শীঘ্রই এই সংখ্যা আরও বাড়বে। যদিও এই সাফল্যের পিছনেও দুর্নীতির গন্ধ এবং হিসেবে সংখ্যা তত্বের কারচুপি দেখতে পাচ্ছেন বিরোধী দলের কাউন্সিলাররা। কলকাতা পুরসভার সমাজ কল্যাণ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডে মা ক্যান্টিনের ১৩৮টি স্টল রয়েছে। এখান থেকে ১ কোটি ৮৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬৯০টি ডিশ বিক্রি হয়েছে। তবে এই তালিকায় শহরের হাসপাতাল চত্বরের মা ক্যান্টিনের স্টলগুলোও রয়েছে। লকডাউনের সময় মূলত গরিব মানুষদের দু মুঠো অন্নসংস্থানের জন্য এই মা ক্যান্টিন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে এই ক্যান্টিন থেকে পাওয়া যায় ভাত, ডাল ও ডিম। লকডাউনের অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে শহরের বহু পরিবারে দুপুরের খাবারের জন্য এই মা ক্যান্টিন হয়ে ওঠে একমাত্র ভরসার জায়গা। পরবর্তী সময়ে কলকাতার পাশাপাশি সারা রাজ্যে এই মা ক্যান্টিন শুরু হয়েছিল রাজ্য সরকারের উদ্যোগে। তবে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, শহরের অনেক জায়গাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই ক্যান্টিন। এই অভিযোগ অবশ্য মানতে রাজি নন কলকাতা পুরসভার সমাজ কল্যাণ বিভাগের মেয়র পারিষদ মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘শহরের কোথাও মা ক্যান্টিন বন্ধ করা হয়নি। কিছু জায়গায় স্থান বদল হয়েছে। প্রতিদিনই ক্যান্টিন থেকে ডিশ বিক্রির সংখ্যা বাড়ছে।’
কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিজেপির সজল ঘোষ বলেন,’আমার ওয়ার্ডে দুটো মা ক্যান্টিন চলতো। একটি বন্ধ হয়ে আছে। আসলে এটাও একটা দুর্নীতি। প্রতিদিনের ডিশ বিক্রির সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হয়।’ পুরসভার আরও এক বিরোধী কাউন্সিলার সিপিআইয়ের মধুছন্দা দেব বলেন,’কোন ওয়ার্ডে কতগুলো মা ক্যান্টিন এখন চলছে, সেখান থেকে প্রতিদিন কত মানুষ খাবার কিনছেন তার একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করুক পুরসভার ক্ষমতাসীন দল। এই প্রকৃত তথ্য হাতে না এলে এমন পরিসংখ্যানে গরমিল থাকতে পারে বলে আমি মনে করি।’
তবে অনেকেই কিন্তু বলছেন এখনও দুপুরের খাবারের বড় ভরসার জায়গা মা ক্যান্টিন। পেশায় বাসকন্ডাক্টর উত্তর কলকাতার রাজাবাজারের বাসিন্দা শেখ ইসমাইলের কথায়, ‘এখনও আমি মা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে দুপুরের খাবার খাই। পাঁচ টাকায় এতো ভরপেট খাবার আর কোথাও মিলবে না।’ ভবানীপুরের বাসিন্দা শ্যামা মণ্ডল পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর কথায় ‘আমি এখনও কাজ সেরে মা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে আনি। তাতে আমার মেয়ে এবং স্বামীরও একবেলা চলে যায়।’