Jadavpur University Student Death : র‍্যাগিং, যৌন হেনস্থার পর স্বপ্নের মৃত্যু! যাদবপুরের রিপোর্টে ভয়াবহ বর্ণনা – jadavpur university internal inquiry committee report revealed that the dead first year student had to face gruesome torture




এই সময়: গুরুতর র‍্যাগিং, অত্যাচার এবং শেষ পর্যন্ত ভয়ানক যৌন হেনস্থার কবলে পড়তে হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা প্রথম বর্ষের মৃত ছাত্রকে। মোট ১৪০ জনের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট জমা করেছে, তাতে ছত্রে ছত্রে রয়েছে সেই অত্যাচারের ধারা বিবরণী। গত ৭ অগস্ট থেকে মৃত্যুর দিন অর্থাৎ ৯ অগস্ট শিউরে ওঠা সেই দু’দিনের যে বর্ণনা অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উঠে এসেছে, তা দেখে অনেকেই আঁতকে উঠছেন। রিপোর্টে বর্ণনা করা সেই ঘটনাক্রমকে পরপর তুলে ধরার চেষ্টা করল ‘এই সময়’।

Jadavpur University Ragging : ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার ১ মাস পার, সেই তিমিরে যাদবপুর
সাউথ সিটি মলে ট্রিট, আউটিং
মৃত ছাত্রের বাবা দাবি করেছিলেন, র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় ধৃত অন্যতম মূল অভিযুক্ত প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীর হাতে তুলে দিয়ে এসেছিলেন ছেলেকে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে, ৭ অগস্ট সন্ধ্যায় সৌরভ বাংলার ওই প্রথম বর্ষের ছাত্রকে আরও ৬-৭ জন ফার্স্ট ইয়ারের পড়ুয়ার সঙ্গে সাউথ সিটি মলে আউটিংয়ে নিয়ে যান। সেখানে বাকিদের সঙ্গে ওই নির্যাতিত ছাত্রকে চা-বিস্কুট খাইয়ে ‘ট্রিট’ দেওয়া হয়। ৭ অগস্ট মৃত ওই ছাত্র এর আগে বাংলা বিভাগে ডিপার্টমেন্টাল ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামেও যোগ দেন।

Jadavpur University : যাদবপুরে মিনিটসে কারচুপির অভিযোগ
এবং তিনি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম নিয়ে অত্যন্ত খুশিই ছিলেন। কিন্তু এই আচরণ একেবারে বদলে যায় ঠিক তার পরদিন। শরীরে কুণ্ঠা, ভয় জায়গা করে নেয়। ৮ তারিখও বিভাগীয় ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে ওই পড়ুয়া প্রায় কারওর সঙ্গেই কথাবার্তা বলেননি। এমনকী দীর্ঘ সময় কিছু না খেলেও বিভাগ থেকে ফুড প্যাকেটও সংগ্রহ করেননি। বিভাগ থেকে হস্টেলে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দু’জন হস্টেল সিনিয়র ক্যাম্পাসে আসেন এবং প্রায় ঘিরে ধরে ওই ছাত্রকে হস্টেল নিয়ে যান। সে সময় ওই পড়ুয়াকে অত্যন্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত লাগছিল।

Ragging Case : ব়্যাগিংয়ের শিকার প্রথম বর্ষের মেডিক্যাল পড়ুয়ারা, জোর করে খাওয়ানো হল মদ-সিগারেট
টার্গেট পুলিশ কোয়ার্টারের মহিলারা
৯ অগস্ট ক্যাম্পাস থেকে হস্টেলে ফেরার পরে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ফের ৬-৭ জন জুনিয়র পড়ুয়া ও মৃত ছাত্রকে নিয়ে সৌরভ ও তাঁর বাহিনী চা খেতে বের হন। সে সময় মৃত ছাত্র অস্বাভাবিক ভাবে ঘামছিলেন। তাঁর চোখেমুখে আতঙ্ক ছিল। সৌরভ ওই ছাত্রকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাও করেন। ওই ছাত্র উত্তর দেন, তাঁর কাছে হস্টেল পুরো আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। তিনি মোটেই কমফর্টেবল হতে পারছে না। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ ওই পড়ুয়াদের নিয়ে হস্টেলে ফিরে আসেন সিনিয়ররা। সাড়ে সাতটা নাগাদ ওই ছাত্রকে মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের ৫৯ নম্বর ঘরে আরও কয়েকজন ফার্স্ট ইয়ারের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় এবং শুরু হয় র‍্যাগিং।

RG Kar Medical College : তৃতীয় দিনও অফিসে বাধা নতুন অধ্যক্ষকে, হাসপাতালের রোগী-পরিষেবাও ব্যাহত!
প্রথমে মৃত ওই পড়ুয়া-সহ বাকি ফার্স্ট ইয়ারকে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে হস্টেলের পার্শ্ববর্তী পুলিশ কোয়ার্টারের মহিলাদের উদ্দেশে গালিগালাজ, অশালীন আচরণ করার নির্দেশ দেন সৌরভ-সহ বাকি সিনিয়ররা। কিন্তু ওই পড়ুয়া সৌরভদের এই নির্দেশ মেনে কাজ করতে না পারায় বাকিদের ছেড়ে দিলেও তাঁকে পরে অতিরিক্ত সময় পুলিশ কোয়ার্টারের মহিলাদের গালিগালাজ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর ওই পড়ুয়া মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। এমনকী সৌরভ এসে ওই পড়ুয়াকে ভয় দেখান, ‘তুই যে ভাবে গালিগালাজ করেছিস। এবার তোকে পুলিশ ধরবেই।’ এই কথা শোনার পর ওই পড়ুয়া ভয়ে-লজ্জায় কান্নায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে।

Ragging in West Bengal : অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াকে বেধড়ক মারধর, র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ এবার স্কুল হস্টেলে
র‍্যাগিং চলাকালীন অম্বলের ওষুধ
কান্নায় ভেঙে পড়া ওই ছাত্র এক সময় এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে তাঁর মাথায়, পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। সে সময়ে হস্টেল সিনিয়রদের অসুস্থতার কথা জানালে র‍্যাগিং চলাকালীন ওই পড়ুয়াকে অম্বলের ওষুধ খাইয়ে দেন তাঁরা। কিছুক্ষণ বাদে একটি অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওই পড়ুয়াকে নীল রঙের টিশার্ট এবং ট্রাউজার পরে ডাইনিং হলে দেখা যায়। সে সময়ও তিনি মানসিক ভাবে দুর্বল ছিলেন। অতিরিক্ত ঘামছিলেন। একজন জানতে চান, এমন আচরণের কারণ কী? তিনি বলেন, ৬৮ নম্বর ঘরে তাঁর উপর সিনিয়র রুমমেটরা অত্যাচার চালাচ্ছে। তিনি আর নিতে পারছেন না। এরপর ডাইনিং হলে কাঁদতে কাঁদতে জানান, ‘আমার ঘরে বসে সিনিয়র দাদারা ভয়ানক রকমের মদ খাচ্ছে। খুব ভয় লাগছে।’

Kolkata Kidnapping Case : স্কুলের সামনে দাঁড়াল বাইক, পড়ুয়াকে টেনে তুলে হাওয়া! শহরে নাটকীয় অপহরণ
শেষ প্রহরের ভয়াবহ আতঙ্ক
ডিনারের পর এ-টু ব্লকের ১০৪ নম্বর রুমে ১২-১৫ জন সিনিয়র মিলে র‍্যাগিংয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেন। এরপর মৃত ওই পড়ুয়া বাদে বাকি সব সিনিয়র এমনকী ফার্স্ট ইয়ারের পড়ুয়াদের রাত ১১টা নাগাদ হস্টেলের মাঠে জেনারেল বডি মিটিং বা জিবির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মৃত পড়ুয়াকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাকে আলাদা করে আরও এক ধৃত সত্যব্রত রায় ও এক প্রাক্তনী মিলে হস্টেলের উপরের ফ্লোরে নিয়ে যান।

Dalit Student Beaten : শিক্ষকদের পাত্রে জল খাওয়ার অপরাধ, দলিত পড়ুয়াকে বেধরক মার রাজস্থানের স্কুলে
কিছুক্ষণ বাদে ফের ১০৪ নম্বর ঘরে ফিরে আসেন। সেখানেই ১১টা থেকে ১১টা ৪৫ পর্যন্ত চলতে থাকে অকথ্য অত্যাচার। বাকি ফার্স্ট ইয়াররা যখন জিবি বৈঠকে ব্যস্ত, ঠিক তখন ওই পড়ুয়াকে আলাদা ভাবে আটকে রেখে চলে র‍্যাগিং। সেখানে সত্যব্রত-সহ প্রাক্তনী ও সিনিয়র পড়ুয়ারা নগ্ন করে অত্যাচার চালান। মেস কমিটির সিনিয়র পড়ুয়ারা এই মজা দেখতে কখনও কখনও জিবি ছেড়ে হস্টেলে ১০৪ নম্বর ঘরে আসছিলেন-যাচ্ছিলেন।

RG Kar Medical College : যাদবপুরের পর এবার আরজি কর, হস্টেলের প্রাক্তন আবাসিকের নামে র‍্যাগিং-এর অভিযোগ
ঝাঁপ না খুন, সিদ্ধান্ত অধরা
৯ অগস্ট রাত ১১টা ৪৫ নাগাদ একাধিক আবাসিক এ-২ ব্লকের ১০৪ নম্বর রুম থেকে কখনও ফুঁপিয়ে কান্না, কখনও আর্তনাদ, কখনও চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ পান। কিছুক্ষণ বাদে আবাসিকদের কেউ কেউ দেখতে পান মৃত ওই পড়ুয়া সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় হস্টেলের করিডরে আতঙ্কিত ভাবে দৌড়োদৌড়ি করছেন। লজ্জা ঢাকতে কখনও তিনি শৌচালয়ে যাচ্ছিলেন, কখনও ৬৫ নম্বর রুমে ঢুকে পড়ছিলেন। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করলেও সিনিয়র পড়ুয়ারা জোর করে সেই ঘরে বা শৌচালয়েও ঢুকে পড়েন।

Jangipur College TMCP : পড়ুয়াদের বেদম মার প্রাক্তনীদের! TMCP-র দ্বন্দ্বে তোলপাড় মুর্শিদাবাদের কলেজ
সে সময় হস্টেলের করিডর, সিঁড়ি সর্বত্র ভিড় করে দাঁড়িয়ে কার্যত মজা দেখছিলেন দলবদ্ধ সিনিয়ররা। একজন অসহায় পড়ুয়ার আর্তনাদ শুনে কেউ এগিয়ে আসা তো দূর, তাঁকে সেফ প্যাসেজ করে সরিয়েও দেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ-টু ব্লকের তিনতলা করিডর থেকে ওই পড়ুয়া কীভাবে নীচে পড়ে গেল এ ব্যাপারে অবশ্য কমিটি কোনও সুনির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে, নিশ্চিত করে এ বিষয়ে বলতে পেরেছেন, এমন কারও সাক্ষ্যপ্রমাণই পাওয়া যাচ্ছে না! তাই কমিটি মনে করছে, এটা খুন হতে পারে আবার দুর্ঘটনাও হতে পারে। কিন্তু তার নেপথ্যে যে র‍্যাগিং, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং ভয়ানক যৌন অত্যাচার কাজ করেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *