‘জৌলুস’ হারিয়েছে কাঁসা, বাঁকুড়ার ‘শিল্প গ্রামে’ টিমটিমে বিশ্বকর্মা


আজ ‘শিল্পের দেবতা’ বিশ্বকর্মার আরাধনায় মেতেছে রাজ্য-সহ গোটা দেশ। কিন্তু রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার ‘শিল্প গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত কেঞ্জাকুড়ার ছবিটা ঠিক উলটো। কাঁসা শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই গ্রাম একটা সময় বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে ঢাকের বাদ্যি আর আলোর রোশনাইতে ঝলমলিয়ে উঠত। প্রতিটি বাড়িতে আলাদা আলাদাভাবে ‘কূল দেবতা’র পুজোর পাশাপাশি গ্রামে বিশালাকার মণ্ডপ তৈরি করে প্রতিমা এনে পুজো হত বিশ্বকর্মার। তবে এখন সে সব অতীত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাঁসা শিল্পের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। সঙ্গে কাঁচা মাল, কয়লা,ইলেকট্রিক বিল-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে হু হু করে। ফলে এবারের বিশ্বকর্মা পুজো প্রায় কোনও বাড়িতে এবার প্রতিমা আসেনি। বর্তমান সময়ে এই গ্রামের ঐতিহ্যবাহি শিল্প ও শিল্পী দুই-ই বিপন্ন। ফলে এখন কার্যত পুজো হয় নমো নমো করে। রীতি ও চিরকালীন প্রথা রক্ষায় যেটুকু না করলেই নয়, শুধু সেটুকুই। আগের সেই জৌলুস আর নেই, বলছেন এই গ্রামেরই শিল্পীরা।

Jalebi : প্যাঁচে প্যাঁচে রস! কেঞ্জাকুড়ায় সুপারহিট ‘জাম্বো জিলিপি’, কীভাবে হয় জানেন?
বাঁকুড়া শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে দ্বারকেশ্বর নদের তীরে কেঞ্জাকুড়া গ্রামে এক সময় সাড়েতিনশোর বেশী কাঁসার বাসন তৈরির কারখানা ছিল। সারাদিন ছেনি, হাতুড়ি, বৈদ্যুতিক যন্ত্র আর হাপরের শব্দে মুখরিত থাকতো গোটা গ্রাম। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কমে এসেছে। এখানকার তৈরি কাঁসার জিনিষপত্র রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে পাড়ি দিত ভিন রাজ্যেও। কিন্তু বর্তমানে কাঁচামালের অভাব ও উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা ক্রমশ কমতে থাকায় ব্যবসা কার্যত ধুঁকছে। পাশাপাশি কোভিডকাল ও লকডাউনের ধাক্কাও এখনও সামলে উঠতে পারেননি কাঁসা শিল্পীরা। ফলে শিল্পীর ঘরেই যখন টান, তখন শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মার পুজো এখন একপ্রকার নিয়ম রক্ষার বিষয়ই হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Handloom Saree : হাতে বোনা শাড়ির বাজার কেড়েছে রেডিমেড টেক্সটাইল, পুজোর আগে মাথায় হাত তাঁত শিল্পীদের
শিল্পীদের অভিযোগ, এই শিল্পকে বাঁচাতে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কেউই উদ্যোগ নেয়নি। তাঁদের আশঙ্কা, সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া না হলে হয়তো চিরতরে হারিয়ে যাবে কয়েকশো বছরের প্রাচীন এই শিল্প। কেঞ্জাকুড়া হারাবে তার ‘শিল্প গ্রাম’ তকমা। আর সেই বিষয়টাই বএখন সবচেয়ে বেশি করে ভাবাচ্ছে এখানকার কাঁসা শিল্পীদের। এক্ষেত্রে শিল্পীদের আবেদন, এই শিল্পকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করুক সরকার, তাতে শুধু শিল্পী পরিবারগুলিই নয়, বাঁচবে প্রাচীন এই শিল্পও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *