ঘটনার সূত্রপাত দিন ১৫ আগে। ক্রেতাদের অভিযোগ, একটি নোটিস দিয়ে আচমকাই জানানো হয়, সেখানে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করা যাবে না। ল্যাপটপে এই ‘ফুল স্টপ’ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ২১টি টেবিল রয়েছে কফি হাউজের যাদবপুর শাখায়। সেখানে ১২০ জন মতো ক্রেতা যাতায়াত করেন নিয়মিত। এঁদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনই ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করেন বলে ক্রেতাদের দাবি।
পালটা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কিছু লোক সিট আটকে দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপে কাজ করায় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। তাই যাদবপুর কফি হাউজ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ক্রেতারা খোঁজ নেন কলেজ স্ট্রিটে। জানা যায়, সেখানে কোনও নোটিস পড়েনি। তা হলে একই কর্তৃপক্ষের অধীন শহরের প্রাচীন দুই কফি হাউজে আলাদা নিয়ম কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
৭৫ জন ক্রেতা সই সংগ্রহ করে এই নোটিস প্রত্যাহারের জন্য কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজে গিয়ে ডেপুটেশন জমা দেন। তারপর কিছুদিন সব শান্ত ছিল। অভিযোগ, দিন তিনেক আগে এক মহিলা ক্রেতা সেখানে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ শুরু করলে কয়েক জন কর্মী বাধা দেন। তাঁকে ল্যাপটপ বন্ধ করতেও বলেন। প্রতিবাদ করেন ওই ক্রেতা। শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। অভিযোগ, সেই সময়ে ওই মহিলাকে উদ্দেশ করে কটূক্তি করা হয়। এবং এমন সময়ে ল্যাপটপ সংক্রান্ত নোটিসটি মহিলা ছিঁড়ে দেন বলে অভিযোগ।
তারপর যাদবপুর থানায় অভিযোগ জানান ওই ক্রেতা। পাল্টা অভিযোগ জানায় কফি হাউজও। এই ঘটনার পর যাদবপুর কফি হাউজটি আর খোলেনি। এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘যে কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করে প্রতিষ্ঠান ফের খোলা দরকার। কারণ বহু ছাত্রছাত্রী, সম্ভাবনাময় কবি-সাহিত্যিক এই ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিয়মিত ভাবনাচিন্তার আদানপ্রদান করে থাকেন।’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক রাজ্যেশ্বর সিনহার বক্তব্য, ‘কফি হাউজের বৌদ্ধিক চর্চা, আদানপ্রদানের প্রগতিশীল পরিসরকে রক্ষা করাও জরুরি। এ ক্ষেত্রে সে কথাটা মাথায় রাখা দরকার।’ সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর গবেষক সৌভিক দাস সেখানকার নিয়মিত কাস্টমার। এ ব্যাপারে তাঁর গলায় রাজ্যেশ্বরেরই সুর।
আবার, শঙ্কর নামে এক নিয়মিত ক্রেতার কথায়, ‘আজ বলছে ল্যাপটপে কাজ করা যাবে না। কাল বলবে বই পড়া যাবে না। পরশু বলবে এক ঘণ্টার বেশি বসা যাবে
না!’ কফি হাউজের কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মহম্মদ জাভেদ বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে একদল লোক ল্যাপটপ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিল দখল করে রাখছিলেন। যাদবপুর কফি হাউজে এমনিতেই জায়গা কম।
তারপর অনেকক্ষণ ধরে কেউ একটা-দুটো অর্ডার দিয়ে টেবিল দখল করে রাখলে আমাদের অন্য কাস্টমাররা বসার জায়গা পাচ্ছিলেন না।’ ব্যবসার ক্ষতি করে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব হচ্ছিল না বলেই আপাতত তাঁরা কফি হাউজটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জাভেদ জানান।