পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার বাসিন্দা সুবীর বিশ্বাসের (৫০) সঙ্গে ভবানীপুরের মধ্যবয়সি এক মহিলার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সুবীর একসময়ে ভবানীপুরে থাকতেন। সেই সূত্রে পরিচয়। কয়েক বছর আগে সুবীর হরিদেবপুরে জমি কিনে বাড়ি করেন। তাঁর স্ত্রী পেশায় নার্স। তবে সাংসারিক গোলমালের কারণে তাঁরা এখন আলাদা থাকেন। সুবীরের সন্তান রয়েছে।
অন্যদিকে মহিলাও বিবাহিতা। নিজেদের পরিবারকে আড়ালে রেখে দু’জনে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি কোনও বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। প্রেমিককে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেন ওই মহিলা। অভিযোগ, পালটা চাপ তৈরি করতে সুবীর ওই মহিলার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন।
সোমবার রাত ৮টা নাগাদ প্রেমিকের বাড়ির ঠিকানায় পৌঁছে যান মহিলা। চিৎকার করতে থাকেন। এই দৃশ্য দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারের কাছে ওই মহিলা সঙ্গে আনা বোতল থেকে গায়ে আচমকা কেরোসিন ঢেলে নিজের আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর জ্বলন্ত অবস্থায় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
কলকাতা পুলিশের ১০০ ডায়ালে ফোন করে বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অগ্নিদগ্ধ ওই মহিলাকে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালের ২ নম্বর বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন পুলিশকর্মীরা। যদিও দেহের বেশিরভাগ অংশ ঝলসে যাওয়ায় তাঁকে আর বাঁচানো যায়নি। তবে মৃত্যুর আগে প্রেমিকের বিরুদ্ধে ওই মহিলা জবানবন্দি দিয়ে যান বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সুবীরকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর খোঁজ চলছে। তদন্তকারীদের অনুমান, সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণেই ঘটনাটি ঘটেছে। কেন এমন কড়া পদক্ষেপ করলেন ওই মহিলা, তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুবীরের প্রতিবেশী মিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের সামনে দাউদাউ করে জ্বলছিলেন উনি। সবাই সাহায্যের চেষ্টা করেন। কেরোসিন ঢালায় গায়ে দ্রুত আগুন ধরে যায়। সুবীর জমি-বাড়ি দালালির সঙ্গে যু্ক্ত। তবে বেশ কিছু দিন ধরে তাঁকে এলাকায় আর দেখা যাচ্ছে না।’
ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, তার পাশেই রয়েছে একটি মন্দির। প্রত্যক্ষদর্শী এক পুরোহিত বলেন, ‘হঠাৎ দেখি ওই মহিলা গায়ে আগুন দিয়ে ছোটাছুটি করছেন। এলাকার লোকজনই পুলিশকে খবর দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।’ পুলিশ সুবীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। কেন সুবীর ক’দিন ধরে বাড়িতে থাকছিলেন না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।