Kolkata Cab Service : স্টিয়ারিংয়ে মহিলা ক্যাবি, পিছনের সিটে পর্ণ! – kolkata lady cab driver face problem


কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়

এয়ারপোর্ট থেকে গড়িয়াহাট পর্যন্ত বুকিং ছিল যাত্রীর। রাত সওয়া ১১টা নাগাদ গাড়িতে উঠেছিলেন। গল্প করতে করতে খানিক পথ যাওয়ার পরে প্রথমে তিনি অ্যাপ ক্যাবের মহিলা চালকের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর চাইলেন। অনেকেই এমন চেয়ে নেন আলাদা করে বুক করার জন্য। আরও কয়েক মিনিট পর ব্যাকসিটে বসে থাকা যাত্রী সামনে ঝুঁকে হাত রাখেন চালিকার গায়ে। এবার তিনি কড়া হতেই ক্ষমা চেয়ে তখনকার মতো সংযত হন যাত্রী। তবে সেটা নিতান্তই সাময়িক।

পরদিন দুপুর থেকেই কখনও ফোন আবার কখনও বা টেক্সট আসা শুরু হয়। দাবি, তাঁর সঙ্গে রাতের খাওয়াটা সেরে বাকি রাতটা একসঙ্গেই কাটাতে হবে হোটেলে। অতিষ্ঠ হয়ে অন্য মহিলা ক্যাবিদের কাছে বিষয়টা জানিয়ে সবাই মিলে প্ল্যান করেন। সেই অনুযায়ী মাঝরাতে গড়িয়াহাটের ওই হোটেলের সামনে এসে যাত্রীকে বাইরে ডাকা হয়।

Kolkata Cab Service : মহিলা ক্যাব চালকের সঙ্গে অশালীন আচরণ, গ্রেফতার অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা
তিনি হোটেলের বাইরে আসতেই সবাই মিলে তাঁকে টানতে টানতে নিয়ে যান গড়িয়াহাট থানায়। সেখানে সব রকমের তথ্য-প্রমাণ দেখে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে আর সময় নষ্ট করেনি পুলিশ।

ব্যতিক্রমী ঘটনা? একেবারেই নয়!

এটাই নাকি স্বাভাবিক। ঘটনাগুলো জানাজানি হওয়াই ব্যতিক্রম। শহরের রাজপথে সারাদিন ধরে অ্যাপ ক্যাবে যাত্রী পরিবহণের কাজে ব্যস্ত থাকেন যে মহিলা চালকরা, প্রতিদিন এমন অজস্র সমস্যা পাশ কাটিয়েই তাঁদের চলতে হয়। কেন ‘পাশ কাটিয়ে’ যান? কেন সরাসরি রুখে দাঁড়ান না? মহিলা ক্যাবিদের সাফ জবাব, ‘তাহলে তো অভিযোগ করেই দিন কাটবে, রুজি-রুটি গোল্লায় যাবে। নিতান্ত বাড়াবাড়ি না হলে খোঁচাখুঁচি করি না।’

কোন ধরনের সমস্যার নিয়মিত মোকাবিলা করতে হয় শহরের মহিলা ক্যাবিদের? একজন মহিলার পক্ষে ওই ধরনের সমস্যা কতটাই বা বিপজ্জনক? শহরের রাজপথে প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে বার হওয়া শম্পা কুন্ডু, শিউলি মুখোপাধ্যায়, সুষমা মিদ্দে, শ্রাবন্তী বেরা, সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় এবং টগরী শীলের মতো ক্যাবিরা সেই অভিজ্ঞতাই শোনালেন।

Vishwakarma Puja 2023: আপনার নিজের গাড়ি থাকলে বিশ্বকর্মা পুজোয় এই কাজ করতে ভুলবেন না
এসি চলছিল বলে জানলার কাচ তোলা ছিল। তবু পিছনের গাড়িটার ধাক্কায় ব্যাকলাইট ভাঙার আওয়াজটা কান এড়ায়নি শিউলি মুখোপাধ্যায়ের। ধাক্কা মারার পর পিছনের গাড়ি কিছুই হয়নি গোছের ভাব করে খুব ক্যাজ়ুয়ালি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। সেটা দেখেই চটে যান শিউলি। তাঁর কথায়, ‘নিজের গাড়িটা ডান দিকে কিছুটা বাড়িয়ে রাস্তাটা ব্লক করে গাড়ি থেকে নেমে সোজা ওই গাড়ির ড্রাইভারের দরজা খুলে তার কলার ধরে বার করেছিলাম। বলেছিলাম, ব্যাকলাইটের দাম কে দেবে? মা ফ্লাইওভারে ততক্ষণে গাড়ির লম্বা লাইন। কেউ বোধ হয় ভাবেনি একটা মেয়ে এমন দুঃসাহসী হতে পারে।’

সেই মুহূর্তে শিউলির ভয় করেনি। কিন্তু ক’দিন আগে ওই একটা রাতের কথা মনে পড়লে সত্যিই সুষমার এখনও গা-ছমছম করে বইকি। সেদিন পর পর বুকিং আসছিল সুষমা মিদ্দের। রাত ১১টা নাগাদ একটা বুকিং এসেছিল নিউটাউনের দিকে। আরোহী বৃদ্ধ যাত্রীকে নামিয়ে যখন বাড়ির দিকে গাড়ি ঘোরালেন, তখন ১২টা বেজে গিয়েছে। শুরু হয়েছে বৃষ্টি। পরদিন সকালে একটা বুকিং ছিল। তাই কিছুটা জোরেই গাড়ি ছুটিয়েছিলেন। এমনই সময় বিকট আওয়াজ করে একটা চাকা ফাটল। সুষমা বলছেন, ‘রাস্তায় একটা জনপ্রাণী নেই। বেশ ভয় করছিল। কিন্তু কিছু করার নেই। নিজেই চাকা বদলানোর কাজ শুরু করেছিলাম। এমনই সময় পাশে একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। দরজা খুলে কয়েকটা বুট পরা পা নামল।’

App Cabs In Kolkata : মহিলা ক্যাব চালকদের নিরাপত্তায় আরও জোর, চালু নয়া হেল্পলাইন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর
সুষমা জানাচ্ছেন, ততক্ষণে ভয়ে প্রাণ উড়ে গিয়েছিল তাঁর। ওই গাড়ির আরোহীদের একজন বলে উঠেছিলেন, ‘কোনও সমস্যা হয়েছে ম্যাডাম? আমরা দেখব?’ সুষমা বলছেন, ‘গলায় সাহায্যের আশ্বাস ছিল। রাস্তায় ঘোরার অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে দিয়েছিল ওঁরা পুলিশ। রাতটহলে বেরিয়েছেন। সেদিন ওঁরা পুরো সময়টা পাশে ছিলেন। ওই রাত ভুলব না।’

একা সুষমা নন, বিশেষ একটা রাতের কথা ভুলবেন না আরও এক মহিলা ক্যাবিও। তিনি বলছেন, ‘দু’টো ছেলে গাড়িতে উঠেছিল। গাড়ি চলতে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা নিজেদের মধ্যে নিচু গলায় কিছু একটা আলোচনা করে নিল। তারপর মোবাইল ফোন বার করে একটা পর্ন সিনেমা চালালো – হেডফোনে নয়।’ গাড়ির চালিকা বলছেন আমি আয়নায় দেখছিলাম ওরাও আয়না দিয়েই আমার মুখ দেখে চলেছে।’

Toto E Rickshaw : রাস্তায় টোটো নামালে রেজিস্ট্রেশন মাস্ট, প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ! নির্দেশ মন্ত্রীর
ভয় করছিল না? কী করলেন তখন? খুব স্বাভাবিক গলায় জবাব এল, ‘কী আর করব, রাস্তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। ওই দু’জনকে পুরোপুরি ইগনোর করে গেলাম। পরে ওরা নেমে যাওয়ার পর রেটিং দেওয়ার সময়ে সিঙ্গল স্টার দিয়ে কারণ হিসাবে ওদের আচরণের কথা লিখে দিলাম।’

সব সময় কি ইগনোর করে কাজ হয়? কখনও কি প্রতিবাদ করতে হয় না?

‘অবশ্যই হয়’- জোরালো মত শম্পা কুন্ডুর। অভিজ্ঞতার জানিয়ে বলছেন, ‘একবার আমার গাড়িতে উঠে এক যাত্রী মাদক নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন। ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ বার করেছেন দেখেই ওঁর উদ্দেশ্য বুঝে গিয়েছিলাম। জানতাম তর্ক করে লাভ নেই। সোজা গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম কাছের এক থানায়। বাকিটা যা করার পুলিশ করেছে।’ ভাড়া নিয়ে গোলমাল? সে তো জলভাত ওঁদের কাছে। টগরী শীল বলছেন, ‘ব্যারাকপুরের দিকে প্যাসেঞ্জার নিয়ে গিয়েছিলাম। নামার সময়ে একটা একশো টাকা বাড়িয়ে দিয়ে তিনি বললেন, এটা রেখে দিন। বাকি আর কিছু নেই। সেই নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। সেবারে স্থানীয় লোকজন আমার পাশে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত পুরো টাকা দিতে বাধ্য হন ওই যাত্রী।’

Sealdah Bongaon Local : সিটে বসা নিয়ে দুই মহিলা যাত্রীর চুলোচুলি-মারামারি-রক্তারক্তি, বনগাঁ লোকালে ধুন্ধুমার
মহিলা ক্যাব-চালকদের নিরাপত্তার বিষয়টা ক্রমশ ভাবাচ্ছে অনলাইন অ্যাপ ক্যাব সংগঠনের কর্তাদের। অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘এত বড় শহরে কোথায় কোন লোক কী মতলবে ঘুরছে সেটা বোঝা অসম্ভব। আমাদের ড্রাইভারদের প্রতিদিনই নানা ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। মহিলা চালক দেখলে অনেকে বাড়াবাড়ি করেন। এই কারণে আমাদের সংগঠন মহিলা ক্যাবিদের জন্য ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন নম্বর (৮৯১০০৭৯২১২) চালু করেছি। এছড়াও ৯৮৩০০৫৮০৪৫ নম্বরটি রয়েছে অভিযোগ নিরসনের জন্য। সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে আমাদের প্রস্তাব, যে যাত্রীর রেটিং ৪.৫ বা তার বেশি, শুধু তাঁদেরই যেন মহিলা চালকদের গাড়ি দেওয়া হয়।’

এত ঝুঁকির পরেও ইচ্ছা করে রোজ সকালে রাস্তায় গাড়ি বার করতে? শ্রাবন্তী বেরা বলছেন, ‘এক মহিলা যাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক এমন গভীর হয়ে গেল যে তিনি তাঁর বান্ধবীদের সঙ্গে দূরে কোথাও গেলে আমাকে আগে থাকতে বুক করে রাখেন।’ সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, ‘সারাদিনের বুকিং ছিল। গাড়ি ছাড়ার আগে যাত্রী একটা ভালো হোটেলে পেট ভরে খাইয়ে তবে ছেড়েছিলেন।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *