Calcutta University News : টু স্যর, উইথ লাভ: চিন্ময়কে বিদায় নিতে নারাজ পড়ুয়ারা – calcutta university english department professor chinmoy guha will retire on september 30 due to which the students are upset


জয় সাহা
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পড়ুয়াদের অনেকেই ইদানীং ক্লাসে মন দিতে পারছেন না। যাঁরা ক্লাসে আসছেন, তাঁদের অনেকে আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে কান্নাকাটি করছেন। কাউকে কাউকে মন খারাপ বা বিষণ্ণতা এতটাই ঘিরে ধরেছে, যে ক্লাসে অনুপস্থিত পর্যন্ত থাকছেন। আসলে ওই বিভাগের একমাত্র প্রফেসর চিন্ময় গুহ অবসর নেবেন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। ২০০২ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন চিন্ময়। তার পর বহু জায়গা থেকে নানা অফার এসেছে তাঁর কাছে। দেশ-বিদেশের নানা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর ডাক পেয়েও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস ছেড়ে চিন্ময় কখনও অন্য কোথাও চলে যাননি। সেই প্রফেসরের জন্যই আপাতত জোট বেঁধেছেন পড়ুয়ারা।

Graduate Course : দেড়মাস পরে বদল কোর্সে, বিপাকে কমার্সের পড়ুয়ারা
তাঁদের পাশে আছেন বিভাগের অন্তত ১৫০ জন প্রাক্তনীও। তাঁরা সবাই মিলে চিন্ময় গুহকে এমেরিটাস প্রফেসর করার দাবিতে ডেপুটেশন দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত ভিসি শান্তা দত্তর কাছে। অনেকটা যেন সেই বিখ্যাত উপন্যাস ও সিনেমা ‘টু স্যর, উইথ লাভ’-এর মতো। যেখানে এক শিক্ষক মন জয় করে নিয়েছিলেন গোটা ক্লাসের পড়ুয়াদের। বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করা সেই শিক্ষকের জন্য পড়ুয়াদের জোট বাঁধার সেই কেতাবি কাহিনি, রুপোলি পর্দার দৃশ্যপট এ বার বাস্তবে যেন দেখা যাচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও।

Jadavpur University : কর্তৃপক্ষে অনাস্তা, ইস্তফা হস্টেল কমিটির প্রধানের
কিন্তু চিন্ময় এমেরিটাস প্রফেসর হতে পারবেন কি না, তাতে অবশ্য সংশয় তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, ইংরেজি বিভাগের দু’-একজন শিক্ষকই সেই বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। গত শতাব্দীর আটের দশকের মাঝামাঝি প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাসের বিখ্যাত অধ্যাপক অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে বদলি করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনকরেছিলেন সেখানকার পড়ুয়ারা। চিন্ময়ের জন্য প্রাক্তনী ও পড়ুয়াদের এই জোটবদ্ধতার সঙ্গে অনেকে প্রেসিডেন্সির সেই ফেলে আসা সময়ের ঘটনার মিল খুঁজে পাচ্ছেন। দু’দশকের বেশি সময় ধরে চিন্ময়ের ক্লাস মানেই পড়ুয়াদের উপচে পড়া ভিড়। প্রাবন্ধিক হিসেবেও তাঁর জনপ্রিয়তা দেশ-বিদেশে। তিনটি নাইটহুড উপাধিতে ফরাসি সরকার তাঁকে ভূষিত করেছে।

Raiganj University News: ‘ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে দুর্ব্যবহার ‘, ক্লাস না হওয়ার অভিযোগ করায় অধ্যাপকদের হাতে ছাত্রের হেনস্থার অভিযোগ
২০০৮ সালে তিনি নেপোলিয়ান প্রবর্তিত নাইটহুড অফ অ্যাকাডেমি পাম্‌স পেয়েছেন। ২০১০ সালে পান নাইটহুড অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স। অতীতে যা পেয়েছেন টিএস এলিয়ট, বোর্হেস, ট্যারেন্টিনোর মতো ব্যক্তিত্ব। ২০১৯ সালে পেয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্টের দেওয়া ন্যাশনাল অর্ডার অফ মেরিট। এটাও ফরাসি নাইটহুড। তা ছাড়া, সাহিত্য অকাদেমি থেকে বিদ্যাসাগর পুরস্কার এবং আরও নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন চিন্ময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তিনি। গত ১৫ বছর ধরে ইংরেজির ইউজি বোর্ড অফ স্টাডিজ়ের চেয়ারপার্সন তিনি। যে বোর্ডের কাজ কলেজের জন্য সিলেবাস ও প্রশ্ন তৈরি করা। পিএইচডি রিসার্চ অ্যাডভাইজ়রি কমিটিরও শীর্ষে আছে চিন্ময়।

Jadavpur University : র‍্যাগার দাদারা টর্চার করেছে সব জুনিয়রকে, চাঞ্চল্যকর তথ্য তদন্তে
সব চেয়ে বড় কথা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষকের এমনই অভাব যে, চিন্ময় অবসর নেওয়ার পর প্রফেসর পদে আর কেউই থাকবেন না ইংরেজি বিভাগে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র-প্রাক্তনীরা জোট বেঁধে চিন্ময়ের জন্য আবেদন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সেমেস্টারের ছাত্রী সারিকা খাতুনের কথায়, ‘আমাদের কাছে স্যরের ক্লাস নেশার মতো। উনি চলে গেলে বিভাগের ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়ে যাবে। কেবল নিজেদের স্বার্থের জন্য নয়, জুনিয়রদের জন্যও আমরা চাই, স্যর এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে থেকে যান।’

Supreme Court : সার্চ কমিটি গঠনে সু্প্রিম হস্তক্ষেপে ব্যাকফুটে আচার্য নিযুক্ত উপাচার্যরা
প্রাক্তনী অগ্নিভ মাইতির কথায়, ‘দিন কয়েক আগে আমরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি, আবেদনপত্র দিয়েছি। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অন্তত ১৫০ জন প্রাক্তনী স্যারের জন্য কলম ধরেছেন।’ চিন্ময়ের জন্য অবশ্য সরব হয়েছেন বহু বিশিষ্ট মানুষও। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘একজন মানুষের অবসর ঠিক হওয়া উচিত তাঁর কর্মক্ষমতা অনুযায়ী। নির্দিষ্ট বয়সের সীমা পেরোলে অবসর নিতেই হবে, এমনটা বিদেশে অচল। চিন্ময় সুবক্তা, লেখক এবং সর্বোপরি ছাত্রদরদি একজন মানুষ।

KMC Book Donation Drive : নাগরিকের বইদানের আবেদন! শিশুদের জন্য অভিনব পরিকল্পনা কলকাতা পুরসভার
ওঁকে এমেরিটাস প্রফেরসর করলে বিশ্ববিদ্যালয়েরই লাভ হবে।’ তবে চিন্ময়কে এমেরেটিাস প্রফেসর করার ক্ষেত্রে কিছু বাধাও রয়েছে। প্রথমত, এমেরিটাস প্রফেসর নিয়োগের বিষয়টি ইউজিসি-র ছাড়পত্রের উপর নির্ভর করে। অতিমারীর সময় থেকে দীর্ঘদিন হয়ে গেল সেই প্রক্রিয়া বন্ধ। আবার বিভাগীয় কমিটির বৈঠকে দু’জন অধ্যাপক এতে বাধা দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। ফলে সেখানেও রেজ়লিউশন আনা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে চিন্ময় কেবল বলছেন, ‘চিরকাল আমি অন্তর থেকে পড়ুয়াদের শ্রদ্ধা করে এসেছি আর তার পরিবর্তে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পেয়েছি। আর কী বলি!’ উপাচার্য শান্তা দত্তর কথায়, ‘চিন্ময়বাবু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অলঙ্কারের মতো। সবার দাবিপত্র পেয়েছি। দেখা যাক, কী করতে পারি!’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *