Heart Attack : হার্ট ফেলে কিডনি ফেল? বায়ো-মার্কার বঙ্গতনয়ার – a bengali research in america has paved the way to predict heart and kidney failure


অনির্বাণ ঘোষ

হার্ট ফেলিয়োরের রোগীদের অনেকেরই আচমকা কিডনি বিকল হয়। ফলে হৃদ-সমস্যা থেকে সেরে উঠেও কিডনির জন্যে প্রাণসংশয় হয় অনেকের। মুশকিল হলো, কার কিডনিতে প্রভাব পড়বে আর কার পড়বে না, সেটা আগাম জানার বা বোঝার উপায় নেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে। এ বার সেই জানা-বোঝার বন্ধ দরজাটাই খুলে দিল আমেরিকায় এক বঙ্গতনয়ার গবেষণা। সেই আবিষ্কারের হাত ধরেই কার কিডনি অকেজো হবে কখন, সেই পূর্বাভাস দেওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।

গবেষণাটি প্রবন্ধের আকারে সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ইনসাইট’ বিজ্ঞানপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আশার আলো দেখছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা। যখন রোগীর হার্ট ফেলিয়োরের সূত্রে গণ্ডগোল করে কিডনি, তখন তাকে বলে কার্ডিয়ো-রেনাল সিনড্রোম (সিআরএস)। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সেটা যে কখন কার হবে, তা আগাম বোঝার ক্ষেত্রে কামাল দেখিয়েছে এই গবেষণা। এবং আরও বড় কথা, কোনও অবলা প্রাণীর জীবন বিপন্ন না করে, অর্থাৎ অ্যানিম্যাল মডেলের বদলে এই গবেষণাটি হয়েছে ‘অর্গান-অন-চিপ’ পদ্ধতিতে।

Dengue Fever : ডেঙ্গির ছোবলে হার্ট ফেলিওর? চিন্তায় স্বাস্থ্যভবন
এটি এমন এক উন্নত প্রযুক্তি যা ল্যাবের মধ্যে মানবশরীরের অঙ্গগুলির হুবহু মিনিয়েচার ভার্সন হিসেবে কাজ করে। সেই মডেলেই কিডনিকে উপস্থাপিত করা হয়েছিল গবেষণায়। আর তাতেই খোঁজ মিলেছে এমন একটি ‘বায়ো-মার্কার’ রাসায়নিকের, যেটি হার্ট ফেলিয়োরের রোগীদের সিআরএস-এর জন্যে দায়ী।

গবেষণাটি হার্ট ফেলিয়োরের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিল বলেই মনে করছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ। সারা দুনিয়ায় প্রতি বছর কমপক্ষে ৫৫ লক্ষ মানুষ হার্ট ফেলিয়োরের শিকার হন, যার মধ্যে অন্তত ১১ লক্ষ ভারতীয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এঁদের মধ্যে আবার ৩৪.৪% হার্ট ফেলিয়োরের রোগী আখেরে কিডনির সমস্যা, অর্থাৎ কার্ডিয়ো-রেনাল সিনড্রোমের শিকার হন। ফলে কাদের কিডনি ভোগাবে, তা আগাম বোঝা গেলে বাঁচবে অসংখ্য প্রাণ।

Hypertension Symptoms : নীরব ঘাতক হাইপারটেনশন নিয়ে উদ্বেগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
গবেষণাপত্রের মুখ্য লেখক, বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিয়োভাস্কুলার রিসার্চ সেন্টারের গবেষক এমেলি চট্টোপাধ্যায় ‘এই সময়’কে বলেন, ‘কিডনি-অন-চিপ পদ্ধতিতে আমরা গবেষণা করে দেখেছি, হার্ট ফেলিয়োর হলে যে সব রোগীর শরীরের বিভিন্ন কোষ থেকে এক্সট্রা-সেলুলার ভেসিকল নামের এক ধরনের ন্যানো-পার্টিকল বের হয়, সেই সব রোগীরই সিআরএস-এর ঝুঁকি বেশি। এই এক্সট্রা-সেলুলার ভেসিকল রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে কিডনিতে পৌঁছলে তা কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে।’

এমেলি জানাচ্ছেন, এই বায়ো-মার্কারটি চিহ্নিত করাই তাঁদের গবেষণার মূল প্রাপ্তি। আগামী দিনে বায়োপসির মাধ্যমে হার্ট ফেলিয়োর রোগীর রক্তে এই এক্সট্রা-সেলুলার ভেসিকলসের উপস্থিতি শনাক্ত করার মতো কিট আবিষ্কার হলে তা সহজেই আগাম জানাতে পারবে, কোন রোগীর সিআরএস-এর ঝুঁকি, আর কার নেই। তিনি জানাচ্ছেন, গবেষণাটিতে তাঁদের সহায়তা করেছে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল, হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়, ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যশালী সব প্রতিষ্ঠান। সৌম্য দাস নামে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিয়োভাস্কুলার রিসার্চ সেন্টারের আর এক বাঙালি বিজ্ঞানী এই প্রকল্পে সহযোগী ছিলেন এমেলির।

Alzheimer Disease : অভিনব জাপানি ওষুধে অ্যালঝেইমার্সের আশার আলো, চিন্তা দামে
এত বড় আবিষ্কারকে স্বাভাবিক ভাবেই স্বাগত জানাচ্ছেন সারা দুনিয়ার পাশাপাশি এই বাংলার চিকিৎসকেরাও। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এমন একটি বায়ো-মার্কার আবিষ্কার নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে। তবে কিট তৈরির আগে এ নিয়ে আরও গবেষণা জরুরি।’ প্রবীণ কার্ডিয়োলজিস্ট রবিন চক্রবর্তীর কথায়, ‘কোন হার্ট ফেলিয়োর রোগীর যে সিআরএস হবে, তা বলা যায় না। পূর্বাভাসের জন্যে কিছু ক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে আজকাল। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। এমন সন্ধিক্ষণে এমন বায়ো-মার্কার খুঁজে পাওয়া আশার কথা।’

প্রতি মুহূর্তের ব্রেকিং নিউজ, আপডেট, বিশ্লেষণ এবং ভিডিয়ো এক ক্লিকে দেখতে ফলো করুন এই সময় ডিজিটাল চ্যানেল। https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *