পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিবাদের জেরে দায়ের হওয়া মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরাও সার্চ কমিটির জন্য রাজ্যের বাসিন্দা বিদ্বজ্জনেদের নাম জমা দিতে পারবেন বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের নির্দেশ, ৪ অক্টোবরের মধ্যে এই তালিকা জমা দিতে হবে।
৬ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। এই সব তালিকা বিবেচনা করেই সার্চ কমিটির সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করবে সুপ্রিম কোর্ট। এদিনও শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে তাঁরা কোনও মতান্তর বা বিবাদ চান না৷ এদিন রাজ্য সরকারের তরফে আবেদন করে বলা হয়, যাতে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মনোনীত দু’জন ব্যক্তিকেও সার্চ কমিটিতে রাখা যায়৷
যদিও প্রস্তাব খারিজ করে রাজ্যের কৌঁসুলি জয়দীপ গুপ্তর উদ্দেশে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘আমরা সিলেকশন কমিটি গঠন করতে চাইছি, ইলেকশন কমিটি নয়৷’ জয়দীপ সওয়াল করেন, ‘একটা অ্যাপ্রিহেনশন আছে৷ রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে অযথা হস্তক্ষেপ কাম্য নয়৷’ খুব তাৎপর্যপূর্ণভাবে তখন বিচারপতি সুর্যকান্ত বলেন, ‘আপনি অন্য পক্ষকে বিশ্বাস করতে না পারলেও সুপ্রিম কোর্টকে বিশ্বাস করতে পারেন৷ আমরা এই থ্যাংকলেস জবটা করছি, যার মূল উদ্দেশ্য হলো, যেন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সঠিক ভাবে পড়াশোনা হয়।’
এরপরে বিচারপতি রাজ্যে মোট সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা, সেখানে কোন কোন বিষয় পড়ানো হয়–তার খতিয়ান জমা দিতে বলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কোন পদ্ধতিতে উপাচার্য নিয়োগ করা হতো, তা-ও জানতে চেয়েছে আদালত।
রাজ্যের কৌঁসুলি দাবি করেন, উপাচার্য নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকার যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে৷ নতুন বিলে এখনও সই করেননি আচার্য-রাজ্যপাল৷ আচার্য-রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের আইনজীবী সুস্মিতা সাহাদত্ত পাল্টা অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বসে পড়তে উদ্যত হয়েছিলেন৷ এনিয়ে মামলাও হয়েছে৷ এই বিষয়টি মাথায় রেখেই স্বাক্ষর করা হয়নি বিলে৷
তিনি শীর্ষ আদালতে আর্জি জানান, ‘সার্চ কমিটিতে কারা থাকবেন, সেই বিষয়ে শীর্ষ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকলে ভালো হয়৷’ এই সময়ে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, ‘রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নিন, তিনি স্বাক্ষর করবেন কি না৷’ বিচারপতি সূর্যকান্তর বক্তব্য, ‘আমরা তো জানি না কোথায় কোথায় কীভাবে অর্ডিন্যান্সকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে৷ আমরা এই বিষয়ে ঢুকব না। হাইকোর্টই দেখুক বিষয়টি৷’
আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টির ফয়সালা হয়ে গেলে হাইকোর্টে অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত মামলাটির গুরুত্বহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিচারপতি সূর্যকান্তর সংযোজন, ‘শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেখানকার পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন৷ পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব আছেন, বিখ্যাত বিজ্ঞানী আছেন, আছেন প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষাবিদরা৷
এঁদের মধ্যে থেকে কারও কারও নাম যদি এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরা জমা দিতে চান, তাহলে দিতে পারেন৷ তবে মামলার সঙ্গে যুক্ত পক্ষগুলি আর কোনও নাম জমা দিতে পারবে না৷’
রাজ্যের প্রস্তাবিত পাঁচ জন
১। সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী (রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য)
২। অভিরূপ সরকার (আইএসআই-এর অধ্যাপক)
৩। দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য)
৪। অভিজিৎ চক্রবর্তী (সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের প্রাক্তন অধ্যাপক)
৫। অনুরাধা মুখোপাধ্যায় (সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য)
ইউজিসির প্রস্তাবিত পাঁচ জন
১। সঞ্জীব শর্মা (ভিসি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ, জয়পুর)
২। টিভি কাট্টিমনি (ভিসি, সেন্ট্রাল ট্রাইবাল ইউনিভার্সিটি, অন্ধ্রপ্রদেশ)
৩। নবীন শেঠ (প্রাক্তন ভিসি, গুজরাত টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি)
৪। অমিত ইউ উপাধ্যায় (ভিসি, ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর স্টেট ওপেন ইউনিভার্সিটি, গুজরাত)
৫। সুনীল কুমার (ভিসি, রাজীব গান্ধী প্রৌদ্যগিকি বিশ্ববিদ্যালয়)
আচার্যের প্রস্তাবিত পাঁচ জন
১। বীরেন্দ্রকুমার তিওয়ারি (ডিরেক্টর, আইআইটি খড়্গপুর)
২। উদয় মৈত্র (আইআইএস, বেঙ্গালুরু, এসএস ভাটনাগর পুরস্কারজয়ী)
৩। রমেশ চন্দ্র (ভিসি, মহারাজ সুরজমল ব্রিজ ইউনিভার্সিটি, ভরতপুর)
৪। এসই হাসনাইন (আইআইটি, দিল্লি, পদ্মশ্রী প্রাপক)
৫। ইন্দ্রনীল মান্না (আইআইটি, খড়্গপুরের অধ্যাপক)
সমস্ত ব্রেকিং নিউজ, আপডেট, বিশ্লেষণ এবং ভিডিয়ো দেখতে ক্লিক করুন এই সময় ডিজিটাল চ্যানেল। https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A