জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বাঁকুড়ায় এক বৃদ্ধা ও ৩ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা টেনে এনে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামিকাল ও পরশু দিল্লিকে প্রতিবাদ কর্মসূচি রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে রবিরার দিল্লি যাওয়ার আগে অভিষেক বলেন, এই মৃত্যুর দায় নরেন্দ্র মোদী, গিরিরাজ সিং আর এখানকার বিজেপি নেতাদের। এদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?
আরও পড়ুন-নারায়ণগড়ে জাতীয় সড়কের ধারে উল্টে গেল তীর্থযাত্রী বোঝাই বাস, গুরুতর আহত ২০
বিষ্ণুপুরের দেওয়াল চাপা পড়ে যে ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যদের দিল্লি নিয়ে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এনিয়ে তিনি বলেন, গতকাল একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, বিষ্ণুপুরের ঘোরামারা বলে একটা গ্রাম রয়েছে। সেখানে ৩টি পরিবারের ৩ ফুলের মতো শিশু, একজনের বয়স ৫ বছর, একজনের বয়স ৪ বছর ও একজনের বয়স ৩ বছর। এই নিম্নচাপে একটি মাটির কাঁচা দেওয়াল ভেঙে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এর দায় কার? ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে কেস ফাইল হয়েছে। এর সঙ্গে আমি রাজ্য প্রশাসনকে অনুরোধ করব ওই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত। যারা কথায় কথায় হাইকোর্টে পিআইএল করে, এখন পিআইএল তো আর পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন নয়, পলিটিক্যাল ইন্টারেস্ট লিটিগেশন হয়ে গিয়েছে। তাদের বলব, একশো দিনের টাকা কেন বন্ধ, আবাসের টাকা কেন বন্ধ এনিয়ে গত ২ বছরে একটাও পিআইএল হয়নি কেন? যদি কেউ দুর্নীতি করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হোক। কিন্তু জোর জবরদস্তি করে টাকা আটকে রাখা হয়েছে কেন। আমার সঙ্গে রয়েছেন ৪ জন। এদের বাড়ি ঘোরামারা গ্রামে। এদের জিজ্ঞাসা করুন এদের পরিবার কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছে কি পাচ্ছে না? তৃণমূল যেখানে হেরেছে সেখানেও সরকারি প্রকল্পের সুবিধে পাচ্ছে, যেখানে জিতেছে সেখানেও মানুষ তা পাচ্ছে। বিজেপি শুধুমাত্র বাংলায় হেরে গিয়েছে বলে বাংলার মানুষের টাকা জোর করে আটকে রেখেছে। এর শেষ আমরা দেখে ছাড়ব।
বাঁকুড়ার ছাতনা ও ঘোরামারার ৩ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা টেনে আনেন অভিষেক। তিন বলেন, আজও একটা ঘটনা ঘটেছে। সেখানে গোয়াল ঘরের দেওয়ার চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে পুরবী হাঁসদা(৬৮) নামে এক বৃদ্ধার। একই ঘটনা বীরভূমে ঘটেছে। যাদের জীবন শুরুই হল না, ৩-৪ বছর বয়স তাদের মৃত্যুর দায় নরেন্দ্র মোদী, গিরিরাজ সিং আর এখানকার বিজেপি নেতাদের। যারা চিঠি লিখে বলেছে বাংলার মানুষের টাকা আটকে দাও যারা দিল্লিতে গিয়ে দালালি করেছে বাংলার মানুষের টাকা আটকে দাও তাদের হাতে আজ বাংলার মানুষের রক্ত লেগে রয়েছে। আমি মনে করি এসব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত এবং গিরিরাজ সিং-সহ সবকটাকে গ্রেফতার করা উচিত। কেন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে না? ৩৩ লাখ মানুষের তালিকা, তার মধ্যে ১১ লাখ লোকের তালিকা আধার সিডিং হয়ে কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে। তার পরেও টাকা বন্ধ। একশো দিনের ৭ হাজার কোটি টাকা বন্ধ। এই যে ৪ জন দাঁড়িয়ে রয়েছে তাদের সবার জব কার্ডের টাকা বন্ধ রয়েছে। এক কাপড়ে এরা দিল্লি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। এদের বাড়িতে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। তার পরও এরা দিল্লি যেতে তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি এই ঘটনা যেন আর কারও বাড়িতে না হয়। কেন এই বঞ্চনা? দুর্নীতি যদি হয়েই তাকে তা হলে বিজেপির এত ভয় কিসের? ট্রেন আটকে দিচ্ছে? বিমান বাতিল করে দিচ্ছে। গোটা দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করে দিয়েছে যাতে তৃণমূল কোনও আন্দোলন করতে না পারে। এটা ২-৩ তারিখের আন্দোলন নয়। যতদিন বাংলার টাকা আটকে থাকবে ততদিন এই আন্দোলন চলবে।
দিল্লির কৃষি দফতরের কর্মসূচি নিয়ে অভিষেক বলেন, পনের কুড়ি দিন আগে আমরা যখন গিরিরাজ সিংয়ের অ্যাপয়েন্টমন্ট চেয়েঠিলাম তখন গিরিরাজবাবু স্পষ্ট জানিয়েছিলেন তিনি দিল্লিতে থাকবেন না। তাই তিনি আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। বিজেপির ৪ সাংসদকে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এটা প্রমাণ হচ্ছে গিরিরাজ সিং দিল্লিতে আছেন। তার পরেও তৃণমূলের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা না করে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। তাদের বৈমাতৃসুলভ আচরণ ফের একবার প্রতিষ্ঠিত। আগের বারও এপ্রিল মাসে ২৫-২৬ জন সাংসদের একটি দল তাঁর অফিসে হাজির হয়েছিলাম। সেই সময়েও কৃষি ভবনে উপস্থিত থাকার পরও তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। গোটা ঘটনাপ্রবাহ থেকে প্রতিষ্ঠিত যে বিজেপি গায়ের জোরে বাংলার মানুষের টাকা আটকে দিয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ২ দিন আগে সাংবাদিকদের স্পষ্ট বলেছেন, এসব আন্দোলন করে কিছু হবে না। আমি একটা ফোন করব টাকা চলে আসবে। আমরা সেটাই গিরিরাজবাবুকে জানাতে চাই। উনি বলেছেন, আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে বলে আমরা টাকা আটকে রেখেছি। আর একদিকে বিজেপির এক নেতা বলছেন একটা ফোন করব টাকা এসে যাবে। উনি কার কথায় পরিচালিত হচ্ছেন? এটা স্পষ্ট যে এরা বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চাইছে। কিন্তু এত চেষ্টার পরও আন্দোলনকে আটকাতে পারেনি। আমাদের প্রতিবাদ করার অধিকারটুকুও এরা কেড়ে নিতে চাইছে। দিল্লি যাওয়ার জন্য ট্রেন শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়েছে, বিমান বাতিল করা থেকে শুরু করে মিটিংয়ের অনুমতি না দেওয়া দিল্লিতে থাকার পরও তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা না করা এটা আমরা মেনে নেব না।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)