গত ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসা জগতে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেও মেডিকা সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিশ্চিন্ত ছিলেন না। ববিতা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে হাসপাতাল থেকে শিশুকন্যা-সহ ছুটি পাওয়ার পর সাফল্যের কথা প্রকাশ্যে আনলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যে বিশেষজ্ঞ দল এ কাজ করেছেন, তাতে ছিলেন নিউরোলজিস্ট এলএন ত্রিপাঠী, নিউরোসার্জেন সুনন্দন বসু, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সৌপ্তিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিশু ও সদ্যোজাত রোগ বিশেষজ্ঞ নিকোলা জুডিথ ফ্লিন এবং দুই অ্যানাস্থেটিস্ট অমিয় মিশ্র ও উপাসনা সরকার।
সন্তানসম্ভবা ববিতাকে গত অগস্টে ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় পাটনার একটি হাসপাতালে। একটি ছোট অস্ত্রোপচার (শান্ট) হয় সেখানে। চিকিৎসকরা তখন তাঁকে ছুটি দিয়ে জানান, দরকারে তাঁর ব্রেন টিউমার পরে দেখা হবে। কলকাতা ইএসআই হাসপাতালে নিউরোসার্জেন সুনন্দন ববিতাকে পরীক্ষা করে দেখেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়।
ববিতা যখন মেডিকায় ভর্তি হন, তখন তিনি আসন্নপ্রসবা। ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ববিতার আগেও আরও দুই সন্তান আছে। গর্ভস্থ সন্তান ও মায়ের সুরক্ষার জন্য হয় সিজার বা ব্রেন টিউমার অপারেশন — যে কোনও একটি অস্ত্রোপচারের কথা ভাবেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দু’তিন দিনের মধ্যে আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন ববিতার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। ব্রেন-স্টেমে চাপ তৈরি করতে শুরু করে ব্রেন টিউমার।
এই ব্রেন-স্টেমই হৃদ্স্পন্দন, শ্বাস, চেতনা, খাবার গেলা এবং হাত পায়ের সঞ্চালনের মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। দেরি করতে চাননি চিকিৎসকরা। মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, লোয়ার সেগমেন্ট সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনটা সেরেই করে নেওয়া হবে ব্রেন টিউমার অস্ত্রোপচার। সেই মতোই এগোয় কাজ। ছুটির সময়ে ববিতা বলেন, ‘আমি চিকিৎসকদের কাছে কৃতজ্ঞ। ওঁরা আমাকে ও আমার সন্তানকে নতুন জীবন দিলেন।’