মহকুমা শহর থেকে দিনহাটা থেকে আট কিলোমিটার দূরে শিঙ্গিমারি নদীর তীরে ক্ষুদ্র জনপদ গোসানিমারি। এই গোসানিমারি বন্দর থেকে দক্ষিনদিক বরাবর সিতাইয়ের রাস্তায় কিছুটা এগোলেই গোসানিমারি হাই স্কুলের উল্টোদিকে পড়বে ঐতিহ্যবাহী কামতেশ্বরী মন্দির। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও বর্তমান মন্দিরটি কোচবিহার মহারাজা প্রাণনারায়নের আমলে ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় বলে মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা রয়েছে। সারাবছর এই মন্দিরে দেবী কামতেশ্বরীর পুজো হয়।
পাশাপাশি শরৎকালে দেবী কামতেশ্বরী দুর্গা রূপে, কার্তিক মাসের দীপাবলীতে দীপান্বিতা কালী রূপে এবং মাঘমাসে রটন্তী কালী রূপে পুজো নেন। শরতকালে প্রতিপদ থেকে মূল মন্দিরের দেবীর সিংহাসনের উত্তর দিকে ঘট বসিয়ে পুজো শুরু হয়। এরপর ষষ্ঠীর দিন মন্দির প্রাঙ্গণে থাকা বেল গাছে বেল বরণ এবং সপ্তমীতে মূল পুজো শুরু হয়। সপ্তমীর দিন সকালে বাইশটি জায়গার মাটি ও ২২ টি জায়গায় জল দিয়ে মহাস্নান করানো হয়। মৈথিলী রীতি অনুসারে এই পূজা হয়ে থাকে। প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন জোড়া কবুতর বলি দেওয়া হয়।
পাশাপাশি অষ্টমীতে মোষ বলি দেওয়া হয়। এছাড়া দশমীতে চালকুমড়ো বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। গর্ভগৃহের সামনে সপ্তমীর দিন যে যঞ্জ শুরু হয় দশমী পর্যন্ত সেই যঞ্জ একটানা চলতে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন যে ভোগ দেওয়া হয় সেই মহাভোগের ক্ষেত্রে কোন লঙ্কার ব্যবহার করা হয় না। গোলমরিচের ব্যবহার করা হয়। পুজোর দিনগুলোতে মন্দিরের বাইরে মেলা বসে। পুজোর দিনগুলোতে ভিড় জমায় দিনহাটা মহকুমা ও মহকুমা বাইরের এলাকার বহু মানুষজন। রাজ আমল থেকেই মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্বে রয়েছেন গোসানিমারির ঝা পরিবার। সেই ঝা পরিবারের সদস্য প্রদীপ ঝা বলেন, ‘আগে এই পুজো দেখতে ওপার বাংলার মানুষজন ভিড় জমাতো। তবে এখন এই অঞ্চলের মানুষ আগে দেবী কামতেশ্বরীর পুজো দেখে তারপর অন্য পুজো দেখতে যায়।’
দুর্গাপুজো সংক্রান্ত আরও অজানা গল্প জানতে ফলো করুন এই সময় ডিজিটালের হোয়াাটস অ্যাপ চ্যানেল। ক্লিক করুন- https://bit.ly/eisamay-whatsapp-channel