প্রায় ৫০ হাজার বছর আগের কথা। ইউএসএ-এর অ্যারিজ়োনার মরুভূমিতে আছড়ে পড়েছিল বিশালাকার উল্কার একাংশ। অভিঘাতের প্রভাব এতটাই ছিল যে, মরুভূমিতে প্রায় ৫৬০ ফুট গভীর এক গহ্বর তৈরি হয়। এখন তা ‘ব্যারিঞ্জার ক্রেটার’ নামেই পরিচিত। সেই উল্কারই একাংশকে এ বার খাস কলকাতায় খুব কাজ থেকে চাক্ষুষ করা যাবে। শুধু কি তাই, এ বার হয়তো সাহস করে প্রেমিক তাঁর প্রিয়তমাকে বলতেই পারেন, ‘তোমার জন্য আমি চাঁদ এনে দিতে না-পারি, একটুকরো চাঁদের পাথর দেখাতেই পারি।’
তার জন্য অবশ্য মহাকাশচারী হয়ে চাঁদে পাড়ি দিতে হবে না। বাস-ট্যাক্সিতে চড়ে ইএম বাইপাসে ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’ (আইসিএসপি)-এর মিউজিয়ামে পৌঁছে গেলে প্রেমিকার মন রাখা যাবে। সেখানে দেখা মিলবে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়া কয়েক লক্ষ বছর আগেকার চাঁদের পাথরখণ্ড। নর্থ-ওয়েস্ট আফ্রিকা থেকে ১৩ গ্রাম ওজনের ওই পাথরখণ্ড আনা হয়েছে স্পেস মিউজিয়ামে।
সংগ্রহের তালিকায় থাকছে ‘অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট’ থেকে ছিটকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণুদের দুষ্প্রাপ্য অংশবিশেষও! তবে আসল চমক হলো– আগামী ২৭ অক্টোবর জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী মেট্রো স্টেশনের কাছে অবস্থিত ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স’ মিউজিয়ামে ‘অবতরণ’ করছেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা। উদ্বোধনের পরে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের সঙ্গে গল্পগুজব করবেন তিনি।
আলোচনা হবে মহাকাশ গবেষণার বিষয়ে। সম্প্রতি ইসরোর চন্দ্রযান-৩ ভর করে চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে রোভার ‘প্রজ্ঞান’, ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। আইসিএসপি-এর অধিকর্তা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক সন্দীপ চক্রবর্তী কথায়, ‘ভারতে এই ধরনের স্পেস মিউজিয়াম নেই, কলকাতাতেই এই প্রথম। চাঁদ-মঙ্গলের হাতছানি তো রয়েইছে। তা ছাড়া প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন থেকে শুরু করে নীল আর্মস্ট্রং সমেত এখনও পর্যন্ত যাঁরা মহাকাশ অভিযানে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের সই থেকে শুরু করে, যে সব মহাকাশযানে করে তাঁরা গিয়েছেন, সেগুলোর রেপ্লিকা থাকবে। এ দেশের মেঘনাথ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসুর মতো বিজ্ঞানীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ডিসপ্লে করা হবে, যা পড়ুয়াদের আরও উৎসাহ বাড়াবে বিজ্ঞান-গবেষণায়।’
জানা যাচ্ছে, পৃথিবীতে আছড়ে পড়া মঙ্গলগ্রহের পাথরের টুকুরোও এখানে ঠাঁই পাচ্ছে। সেটা পাওয়া গিয়েছিল মরক্কোয়। এ রকমই ১২০০ দুষ্প্রাপ্য কালেকশন থাকতে চলেছে মিউজিয়ামের অন্দরে। ‘মহাকাশযান সেকশন’, ‘স্যাটেলাইটস অ্যান্ড ইনস্ট্রুমেনটেন্টেশন্স’, ‘অ্যাপেলো হল’, ‘মিনি প্ল্যানেটরিয়াম’-সহ ১০টি বিভাগ থাকবে সেখানে। দেখতে পাওয়া যাবে ভারত, ইউএসএ, রাশিয়া এবং ইউরোপের নানা দেশের মহাকাশযানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং যন্ত্রাংশগুলির অবিকল রেপ্লিকাও।
মহাকাশে পৌঁছনোর আগে, পৃথিবীতে জীবনের আত্মপ্রকাশের দলিলও এখানে ঠাঁই পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে ৩৭০ কোটি বছর আগে এককোষী প্রাণী সায়ানোব্যাক্টেরিয়াই হলো পৃথিবীতে প্রাণের প্রথম প্রাণ। সেই ব্যাক্টেরিয়ার জীবাশ্মকেও এই মিউজিয়ামে দেখা যাবে।