জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাজভবনে রাজ্যপালের দোরগোড়ায় ধর্না দিয়ে কেন্দ্রের উপরে চাপ সৃষ্টি করেছে তৃণমূল। সেরকম এক আবহে তৃণমূলের একাধিক পুরপ্রধানের বাড়িতে সাতসকালে হানা দিয়ে তোলপাড় ফেলে দিল সিবিআই। পুর দুর্নীতির তদন্তে একযোগে ১২ জায়গায় হানা দেয় সিবিআই। হানা দেওয়া হয়েছে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে, ভবানীপুরে মদন মিত্রের বাডিতে। কলকাতার পাশাপাশি হালিশহর ও কাঁচড়াপাড়া, দমদম, ব্যারাকপুর পুরসভার আধিকারিকের বাড়িতে হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। এনিয়ে এবার সরব বিজেপি।
আরও পড়ুন- রবিবাসরীয় সকালে ববি-মদনের ‘দুয়ারে সিবিআই’
ওই তল্লাশি নিয়ে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, তল্লাশি তো সকালেই হয়। আমরা শুধুমাত্র দর্শক। যা হচ্ছে তা আদালতের নির্দেশে ও নজরদারিতে। আগে তদন্তের শ্লথ হয়ে গেলে সিপিএম-কংগ্রেস একসঙ্গে নেমে যেত। তখন বলা হতো প্রতিহিংসার রাজনীতি। এখন তৃতীয়পক্ষ এসে গিয়েছে মহামান্য আদালত। তারা ইডি-সিবিআইকে ভর্ত্সনা করছে। তাদের তদন্তের অভিমুখ, তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রতিদিনই মন্তব্য করছে। তির্যক মন্তব্য ভেসে আসছে বিচারপতির পক্ষ থেকে। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে তদন্ত হচ্ছে। পুর নিয়োগ দুর্নীতি একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূল কংগ্রেস কী বলতে পারে আর কী বলতে পারে না তা নিয়ে রাজ্যবাসীর একটি ধারনা রয়েছে। কিন্তু তা তো আদালতে বলতে হবে। তাদের বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা নেই। বারবার তৃণমূল আদালতে যাচ্ছে। সেখানে তারা পাত্তা পাচ্ছে না।
অন্যদিকে, সিবিআইয়ের অভিযান নিয়ে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, বিজেপি সিবিআই ও ইডির উপরে যে ভাবে চাপ দেয় সেইভাবেই তারা কাজ করেছে। আজ এনডিএ সরকার আছে। কাল অন্য কোনও সরকার ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু সিবিআই-ইডি তো দেশে থাকবে। তাই এদেরও ভাবনা চিন্তা করে কাজ করা উচিত। আমরা চাইব প্রতিশোধ পরায়ণতা ছেড়ে প্রকৃত তদন্ত করে দুর্নীতি দমন করা হোক। ফাস্টট্র্যাক কোটে এইসব মামলার সমাধান হওয়া দরকার। কলকাতা ছাড়াও পুর তদন্তের শহরতলির একাধিক জায়গায় হানা দেয় সিবিআই। কাঁচারাপাড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুদামা রায়ের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। তিনটি আলমারির খুলে নথি পরীক্ষা হয়।
২০১৪-১৫ সালে ৬০ পুরসভার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বরাত পায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীলের কোম্পানি। প্রতিটি পুরসভায় গড় ১০০ জন করে মোট ৬০০০ লোক নিয়োগ করা হয়। প্রায় ৫ হাজার ওএমআর শিটে কারচুপি করা হয় বলে অভিযোগ। সেই মমলার তদন্তে আজ মোট ১২টি জায়গায় হানা দেয় সিবিআই। এর মধ্যে রয়েছে কলকাতা, কাঁচরাপাড়া ব্যারাকপুর, হালিশহর, দমদম, উত্তর দমদম, কৃষ্ণনগর, হালিশহর, টাকি, ভবানীপুর, কামারহাটি ও চেতলা। মদন মিত্রের দুটি বাড়িতে অভিযান হয়েছে। অনেক জায়গায় প্রাক্তন পুরপ্রধানদের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে। এবছর মার্চ মাসের ২০ তারিখে অয়ন শীলের বাড়িতে এমন কিছু নথি পায় যেখানে দেখা যায় রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় পরীক্ষা নেওয়ার বরাত পায়। কিছু ওএমআর শিট পাওয়া যায়। তদন্তে উঠে আসে অয়ন শীলের কোম্পানি ৬০ পুরসভার পরীক্ষার বরাত পায়।
সিবিআই তল্লাশি নিয়ে সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, বেআইন কাজের সঙ্গে তৃণমূল জড়িত থাকবে এনিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই স্বাভাবিক সত্যটা জানার পরও সিবিআই তাদের তদন্তে অনেক ঢিলেমি করছে। আদালতের কষাঘাত না থাকলে তারা নড়েচড়ে বসতেন না। একই দিনে তারা বিভিন্ন জায়গায় তদন্তে গিয়েছেন। আশাকরি তদন্ত ফলপ্রসু হবে। আশা করব এই তদন্ত সারদা নারদা হবে না।
অন্যদিকে, এনিয়ে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, তৃণমূলের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। তা থেকে নজর ঘোরাতেই কদিন আগেই দেখালাম উত্তর ২৪ পরগনায় বিভিন্ন প্রান্তে সিবিআই হানা দিয়েছে। আজও সেটাই হচ্ছে। সিবিআইয়ের নাম থাকা সত্বেও শুভেন্দুর কেশাগ্র স্পর্শ্ব করা হয় না। প্রসন্ন রায়ের বাড়িতে দিলীপ ঘোষের বাড়ির দলিল পাওয়া গেল। তারও কিছু হল না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এসব করা হচ্ছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)