শিলিগুড়ি: তিস্তার চর কি ৮৪’র সিনেমা ‘দ্য কিলিং ফিল্ডস’-এর মতো মারণক্ষেত্রের চেহারা নিচ্ছে। গত মঙ্গলবারের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারের রাতের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ইতিমধ্যেই ৫৫টির বেশি দেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজের সংখ্যা এখনও শতাধিক। তার চেয়েও উদ্বেগের ঘটনা হলো, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে সিংতামে তিস্তা নদীগর্ভেই সেনাবাহিনীর ছাউনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেনাদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী অন্তত ২২ জন সেনা নিখোঁজ। তার মধ্যে সাতটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। এই সেনা ছাউনির সমস্ত গোলাবারুদ তিস্তার প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়েছে। গত শুক্রবারই সেবক করোনেশন সেতু লাগোয়া আন্ধেরি ঝোরায় তিস্তার চরে নিজে থেকেই একটি মর্টার বিস্ফোরণ হয়। সেদিনই বরদাঙে সেনা ছাউনির খুব কাছেই বাগেখোলা নামে একটি পাহাড়ি ঝোরার কাছে বালির চরের ভিতর থেকে প্রথমে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। পরে আগুন বার হতে শুরু করে। স্থানীয়দের অনুমান, ওই ঝোরার কাছেও সম্ভবত বালি চাপা পড়ে গিয়েছে কিছু গোলাবারুদ।
দ্য কিলিং ফিল্ড গল্পের মূল বিষয়বস্তু হলো, যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ইউএস আর্মি কম্বোডিয়া ছেড়ে পালানোর সময়ে দেশ জুড়ে মাটির তলায় ডিনামাইট পুঁতে রেখে যায়। ইউএস আর্মি চলে যাওয়ার পরে কৃষকেরা জমিতে চাষ করতে গিয়ে বার বার ডিনামাইট বিস্ফোরণে মারা যাচ্ছেন। সিকিম কিংবা বাংলায় কোনও ইউএস আর্মি নেই। কোনও যুদ্ধের ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে বিপদটা এখন প্রায় একই ধরনের। তিস্তা চরে সেনাদের কত গোলাবারুদ এমন চাপা পড়ে রয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কেননা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ওই সেনা ছাউনির সমস্ত নথিপত্র পর্যন্ত ভেসে গিয়েছে। ফলে গোলাবারুদের হিসাব বার করা এক কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুকনার এক সেনা আধিকারিক বলেছেন, ‘আমরা সমস্ত গোলাবারুদের হিসাব তৈরি করছি। একই সঙ্গে সিংতাম থেকে কোচবিহার পর্যন্ত তিস্তা লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের সন্দেহজনক কোনও বস্তুতে হাত না-দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে প্রচারও চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে জওয়ানরা চরে ডিটেক্টর ব্যবহার করে গোলাবারুদ চাপা রয়েছে কি না পরীক্ষা করছেন।’
বৃহস্পতিবার সেনা, সিআইডির বোমা বিশেষজ্ঞরা ক্রান্তি এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালিয়ে আরও ত্রিশটি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করেছে। কিন্তু বিপদ এখনও শেষ হয়নি। সেনাদের বিষয় বলে সিকিম রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে কালিম্পং, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলা প্রশাসনও এই বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। তবে বিপদটা কতটা ভয়ানক, সেটা আঁচ করে সকলেই প্রচারে নেমেছেন। কিন্তু কতদিন চলবে এই প্রচার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে তিস্তার চর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তাত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বহু মৎস্যজীবী তিস্তার উপরে ভরসা করে বেঁচে থাকেন। শীতে পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল এই তিস্তার চর। বুনো হাতির পাল ডুয়ার্স থেকে তরাইয়ে এই তিস্তা পেরিয়েই যাতায়াত করে। সেনারা গোলা ছোড়ার অভ্যাস করার সময়ে অনেক কিশোর এই চরে ঘুরে বেড়ায় গুলির খোল উদ্ধার করার জন্য। মেল্লি এলাকার এক বাসিন্দা খেমবাহাদুর রাই বলেছেন, ‘আমরা সবাইকে বলেছি, আপাতত তিস্তার চরে নামা যাবে না। কিন্তু একটা সময়ে লোকে নামবেই। তখন দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে কি না সন্দেহ থাকছেই।’
বুধবার রাতে জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তিতে তিস্তার চরে এমনই বেশ কিছু মর্টার সহ নানা আগ্নেয়াস্ত্র পেয়ে লোকজন বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। একটি পরিবার সেই মর্টার ভেঙে ভিতরে কী রয়েছে, সেটা দেখতে গেলে বিস্ফোরণ হয়। ওই ঘটনায় এক জন মারা যায়। আরও চারজন জখম এখনও চিকিৎসাধীন।
সিকিম সংক্রান্ত যে কোনও খবরের জন্য ফলো করুন এই সময় হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেল। ক্লিক করুন- https://bit.ly/eisamay-whatsapp-channel