শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্য়ায়: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেলের গেটে সিসিটিভি বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হল। সিসিটিভি বসানোর জন্য বিশেষ খুঁটি পোঁতা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের মেইন গেটের সামনে। এই খুঁটিতে ২ ধরনের সিসিটিভি বসবে। একটি সিসিটিভি-র মাধ্যমে কারা ঢুকছে বা বের হচ্ছে, সেই বিষয়টির উপরে লক্ষ্য রাখা হবে। অন্য সিসিটিভি দিয়ে যে সমস্ত গাড়ি ঢুকছে বা বের হচ্ছে, সেই বিষয়ে তথ্য সংরক্ষিত হবে। এই মেইন হস্টেলেই গত ১০ অগাস্ট তিন তলা থেকে পড়ে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া গুরুতর জখম হয়। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর ঘটনার পিছনে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। পরে তদন্তেও র্যাগিংয়ের ঘটনা প্রমাণিত হয়।
এই খুঁটিতেই বসবে CCTV
অভিযোগ ওঠে, ঘটনার দিন রাতে মেইন হোস্টেলে অনেক পাস আউট ছাত্র ছিল। তদন্তে উঠে আসে গার্লফ্রেন্ড নেই বলতেই ওই প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার যৌন পরিচয় নিয়ে টিটকিরি দেওয়া শুরু হয়। তাকে বিবস্ত্র হতে বাধ্য করা হয়। ইন্ট্র্রোর নামে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়… তিন পর্যায়ে মানসিক অত্যাচার চলে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যন্ত ছিল না ওই পড়ুয়া। কেঁদে ফেলে নদিয়া থেকে পড়তে আসা ওই পড়ুয়া। ঘরে ঢুকে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা করে। মাকেও ফোন করে সে। জানা যায়, ঘটনার রাতে কুরুচিকর অশালীন শব্দ লিখে দেওয়া হয়। জানলার সামনে দাঁড়িয়ে ওই ছাত্রকে চিৎকার করে তা বলতে বলা হয়। প্রথমে বলতে অস্বীকার করে ওই ছাত্র। তারপর আস্তে আস্তে বলে। তবে তা পছন্দ হয়নি সিনিয়র দাদাদের। এরপর জানলার সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে গালিগালাজ করতে বলা হয়। এদিকে জানলার উলটো দিকেই রয়েছে আবাসন। এই পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যন্ত ছিল না ওই পড়ুয়া। কেঁদে ফেলে নদিয়া থেকে পড়তে আসা ওই পড়ুয়া।
তারপর ডিনকে ফোন করার পর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায়ের মানসিক চাপ। তখন ছাত্রকে দিয়ে জোর করে চিঠি লেখানোর চেষ্টা শুরু হয়। বাংলা বিভাগের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে চিঠি লিখতে জোর করা হয়। ওই ছাত্র সেই চিঠি না লিখলে, চিঠি লেখে দীপশেখর দত্ত। চিঠি লিখে তারপর জোর করে ছাত্রকে দিয়ে সই করানো হয়। যাতে আরও মানসিক চাপে পড়ে ওই পড়ুয়া। এরপর তৃতীয় পর্যায়ে ওই ছাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার গার্লফ্রেন্ডের নাম। ছাত্র জানায়, তার কোনও গার্লফ্রেন্ড নেই। তখনই ছাত্রের যৌন পরিচয় নিয়ে শুরু হয় টিটকিরি। ছাত্রকে বিবস্ত্র হতে জোর করা হয়। এই পরিস্থিতিতে একটা ঘরে ঢুকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে ওই ছাত্র। মাকে ফোন করে সে। এরপরই তিন তলা থেকে পড়ে যায় সে। এদিকে এই ঘটনার পরে মেইন হোস্টেলের গেট আটকে দেওয়া হয়েছিল। যাতে পুলিস ঢুকতে না পারে!
প্রশ্ন উঠেছিল, নিয়ম থাকলেও কেন হোস্টেলের গেটে বা ভিতরে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা নেই? অবশেষে মেইন হোস্টেলের গেটে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হল। পড়ুয়া মৃত্যুর পর সব মহল থেকেই সিসিটিভি বসানোর দাবি ওঠে। গ্রেফতার হন এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরী সহ আরও কয়েকজন বর্তমান পড়ুয়া ও প্রাক্তনী। চাপে পড়ে এরপর গত ২৫ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগানোর ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যু করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ক অর্ডারে বলা হয় সেদিন থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে সিসিটিভি লাগানোর কাজ শেষ করতে হবে। একটি সরকারি সংস্থাকে দিয়েই এই সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। সিসিটিভি লাগানোর জন্য সরকারের কাছে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা চায় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন, Kamduni: কামদুনিকাণ্ডের জল গড়াল দিল্লিতে, সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি সিআইডি-র
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)