Weight Loss : মেদ হবে লেস, চলো পাশের দেশ – alipore businessman travel bangladesh for special weight loss medicine


অনির্বাণ ঘোষ

কেউ কেউ বাংলাদেশ যান ইলিশের জন্য। কেউ যান সংস্কৃতির টানে। কেউ বা ভিটেমাটির শিকড় খুঁজতেও সীমান্ত পেরিয়ে পৌঁছে যান ওপার বাংলায়। চন্দ্রনাথ মৌলিকের সে সব বালাই নেই। তিনি বাংলাদেশে পাড়ি জমান ওজন ঝরাতে! না, কোনও ব্যায়াম বা ওয়ার্কআউটের সংস্থান নেই সীমান্ত পারে। আলিপুরের ওই ব্যবসায়ীর পড়শি দেশে যাতায়াতের কারণ একটি বিশেষ ওষুধ। যা পশ্চিম দুনিয়ায় ওবেসিটির বাজার কাঁপানোর পর মিলতে শুরু করেছে বাংলাদেশেও।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র না-পাওয়ায় ভারতে এখনও অমিল। অগত্যা… কলকাতার চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এমন ‘চন্দ্রনাথ’ এপার বাংলায় নেহাত কম নয়। দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরুর বিত্তবান স্থূলকায়রা অবশ্য আজকাল ইউএসএ বা দুবাই পাড়ি দিচ্ছেন ‘ওজ়েম্পিক’ নামে ওই ওষুধের টানে। সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে মহার্ঘ ওষুধটি কিনে আনছেন। সে জায়গায় বঙ্গবাসীর ভরসা প্রতিবেশী মুলুক।

Cancer Treatment : ব্যাঙের বিষে স্তন ক্যান্সারে লাগাম, দিশা গবেষণায়
চন্দ্রনাথের কথায়, ‘ইউএসএ-র তুলনায় বাংলাদেশে যাওয়ার খরচ অনেক কম। ওষুধের দামেও জমিন-আসমান ফারাক।’ মাঝবয়সি ওই ব্যক্তি জানাচ্ছেন, ‘ওজ়েম্পিক’-এর চারটি ইঞ্জেকশন পেনের দাম ইউএসএ-তে প্রায় ৯০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৫ হাজার), সে জায়গায় বাংলাদেশে সেগুলির দাম ১৪ হাজার বাংলাদেশি টাকার কিছু বেশি (ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে ১০ হাজার মতো)। তাই মাস তিনেক অন্তর ওপার বাংলায় গিয়ে ইঞ্জেকশনের স্টক নিয়ে দেশে ফেরেন চন্দ্রনাথ।

সপ্তাহে একটা করে ইঞ্জেকশন নিয়ে যে গত এক বছরে ৯৮ কেজি থেকে ৭২ কেজি হয়েছেন, জানান রীতিমতো আহ্লাদের সঙ্গে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বলছে, ২০২১ থেকে পশ্চিমের দেশগুলিতে মারকাটারি বিক্রি ওষুধগুলোর। তাঁরা জানাচ্ছেন, ইলন মাস্ক থেকে শুরু করে বেশি কিছু হলিউড তারকা খিদে কমিয়ে ওজন কমানোর এই সব ওষুধে ফল পেয়েছেন। বিপুল দাম সত্ত্বেও ওষুধগুলি দেদার বিকোচ্ছে বহু দেশে।

Wedding Destination : বাঙালির ওয়েডিং ‘ডেস্টিনেশন’ এখন পুরী-শুশুনিয়াও
বাংলাতেও ওজনদার মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। লাইফস্টাইলের বারোটা বাজায় ঘরে ঘরে এখন ওবেসিটি আর ওভার-ওয়েটের বিপদ। তাই ওজন ঝরানোর মরিয়া চেষ্টায় মত্ত, গুগলপ্রেমী বঙ্গবাসী স্থূলকায়দের এখন মন মজেছে মহার্ঘ ‘ওজে়ম্পিক’, ‘উইগোভি’, ‘মাউনজারো’ ইত্যাদি ব্র্যান্ডে। ‘নোভো নর্ডিক্স’, ‘ইলাই লিলি’-র মতো বহুজাতিকের তৈরি ‘সেমাগ্লুটাইড’, ‘টিরজেপাটাইড’ গোত্রের এই ওষুধগুলি যে সত্যিই ম্যাজিকের মতো ওজন কমায়, তাতে সন্দেহ নেই। কলকাতায় সেগুলি কবে আসবে, তা জানতে উৎসাহের শেষ নেই।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান – এখানেও ১৫-৪৯ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রায় ১৯% পুরুষের এবং ১৮% মহিলার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৫ কেজি বেশি। এই বয়সিদের মধ্যেই আবার ৪% পুরুষ ও ৬.৪% মহিলা ওবেসিটির শিকার। হেঁটে, দৌড়ে, জিম করে, ডায়েটিংয়ে ভরসা রেখেও ভুঁড়ি আর ওজন আশানুরূপ হারে না-কমায় তিতিবিরক্ত এঁদের অনেকেই। কিন্তু সাধ থাকলেও কি আর সকলের সাধ্য থাকে বিদেশে গিয়ে ওষুধ কেনার! পয়সাওয়ালা ওজনদারদের কাছে অবশ্য সেটাই এখন ইন-থিং।

Space Museum : চাঁদের পাথর কলকাতায়, ২৭শে মহানগরে রাকেশ শর্মা
এ দিকে, সংস্থাগুলি এখনও এ দেশে ওষুধ-বিপণন শুরু করেনি। এমনকী, কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার জন্য যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল জরুরি, সেটিও হয়নি সে ভাবে। তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, আগামী বছরের গোড়ার দিকেই ‘মাউনজারো’ ব্র্যান্ডটি মিলতেও পারে ভারতীয় বাজারে। তার আগে অবশ্য ভরসা বিদেশি বাজার।

এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিশেষজ্ঞ সতীনাথ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘ইদানীং ওজন কমাতে মরিয়া রোগীদের প্রশ্নবাণে আমরা জর্জরিত। তাঁদের বুঝিয়ে উঠতে পারি না যে ওষুধগুলো এখানে পাওয়া যায় না।’ সতীনাথ জানাচ্ছেন, তাঁর কাছে আসা বাংলাদেশি রোগীদের মধ্যে যাঁরা মাত্রাতিরিক্ত বেশি ওজনের শিকার, তাঁদের প্রেসক্রিপশনে তিনি লেখেন ‘সেমাগ্লুটাইড’ বা ‘টিরজেপাটাইড’ গোত্রের ওষুধ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কলকাতায় এমন অনেকেই প্রেসক্রিপশনে ‘ওজ়েম্পিক’, ‘উইগোভি’র মতো ওষুধ লেখেন এ দেশীয় মানুষের জন্যও। এবং ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে ওষুধ দিতে আপত্তি করেন না বাংলাদেশের ওষুধের দোকানিরা।

Cancer Medicine : ৬ মাসের চিকিৎসায় থার্ডস্টেজ ক্যানসারকে হারালেন মহিলা, নেপথ্য কোন ‘ম্যাজিক’ ওষুধ?
একবার বা দু’বার ওপার বাংলায় গিয়ে পাইকারি দামে ছ’মাস থেকে এক বছরের জন্য অনেকটা ওষুধ কিনে অনেকেই ফিরে আসেন এপার বাংলায়। বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের ছাড়পত্র ছাড়া এ দেশে কোনও ওষুধের উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। আমাদের সদস্য কোনও পাইকারি বা খুচরো ওষুধ বিক্রেতা এর সঙ্গে জড়িত নন। তবে বিদেশে গিয়ে প্রেসক্রিপশন মেনে কেনা ওষুধ নিয়ে কিছু বলার নেই।’

https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *