সেই সময়ে প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত রেল পুলিশ কর্মীদের (জিআরপি) বিষয়টি নজরে পড়ে। দ্রুততার সঙ্গে তাঁরা স্ট্রেচার নিয়ে আনেন। বধূকে সেই স্ট্রেচারে তুলে লাইন পেরিয়ে ভর্তি করান কালনা মহকুমা হাসপাতালে। কিছু পরে স্বাভাবিক ভাবে পুত্রসন্তান প্রসব করেন তরুলা। স্বামীর মুখে তখন স্বস্তির হাসি। মা ও সস্তান দু’জনেই সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন খবরে খুশি জিআরপি কর্মীরাও।
মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বাসিন্দা ওই দম্পতির এটি তৃতীয় সন্তান। আগের দুই সন্তান প্রসবের সময়ে কোনও জটিলতা ছিল না। কিন্তু এবার কিছুটা জটিলতা তৈরি হওয়ায় দমদম নাগেরবাজারের এক স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাতে সোমবার কলকাতায় এসেছিলেন ওই দম্পতি। স্বামী ইনামুল বলেন, ‘সোমবারই ওই চিকিৎসককে দেখিয়েছিলাম। বুধবারও ওঁর কাছে স্ত্রীকে নিয়ে যাই। এটা ৩২ সপ্তাহ চলছিল। উনি বলেন, সিজার করাতে হতে পারে, ভেন্টিলেশনেরও প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে যে কোনও মুহূর্তে যে সন্তান প্রসব হতে পারে এমন কথা বলেননি উনি।’
এর পরেই বাড়ি ফেরার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেসে ওঠেন ইনামুল। ট্রেন শিয়ালদহ ছাড়ার পরই যন্ত্রণা শুরু হয় স্ত্রীর। নৈহাটি ছাড়ার পর যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। ইনামুল বলেন, ‘যন্ত্রণা এত বেড়ে যায় যে, অম্বিকা কালনা স্টেশনে নেমে যাব বলে ঠিক করি। স্টেশনে নামলেও অচেনা জায়গায় তখন কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তখনই জিআরপি-র পুলিশকর্মীরা চলে আসেন।
বিষয়টি জেনে দ্রুততার সঙ্গে তাঁরা কয়েকজন মহিলা পুলিশকর্মীকে নিয়ে আনেন। স্ট্রেচারে স্ত্রীকে তুলে মূল গেটের দিকে নিয়ে আনেন তাঁরা। তার পর টোটোয় তুলে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় স্ত্রীকে।’ বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তরুলা। হাসপাতালের সুপার চন্দ্রশেখর মাইতি বলেন, ‘মা ও সন্তান দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন।’
সন্তানের জন্মে পুলিশকর্মীদের ভূমিকা ভুলতে পারছেন না তরুলা। বলেন, ‘এই ঋণ কোনও দিন শোধ করতে পারব না। পুলিশ সম্পর্কে বহু কথা শুনতে পাই। কিন্তু পুলিশের এই মানবিক মুখের কথা কখনও ভুলতে পারব না। আমি চাই, ছেলেও পুলিশ হোক। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়াক।’
কালনা জিআরপি-র ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা জটলা দেখে বিষয়টি জানতে পারলে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। মা ও সন্তান দু’জনেই সুস্থ রয়েছে জেনে ভালো লাগছে।’