অনুষ্টুপ রায় বর্মণ: ব্যাপক বিতর্কের মধ্যেই জাতীয় শিক্ষানীতি লাগু করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। পাশাপাশি কেন্দ্রের নির্দেশের অধিকাংশ অংশকে রেখে এই রাজ্যের একটি নিজস্ব শিক্ষানীতি হাজির করেছে সরকার। আর এই নিয়েই তৃণমূল এবং বিজেপি-কে এক ব্র্যাকেটে ফেলে এবার আক্রমণ শানালো ভারতের ছাত্র ফেডারেশন।
পুজোর ঠিক আগেই গত দু’সপ্তাহ ধরে রাজ্যের সমস্ত জেলা সদরে সভা-সমাবেশ এবং মিছিল করেছে এসএফআই। রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, ‘তোলাবাজ-দাঙ্গাবাজদের শিক্ষানীতি পুরোপুরি রূপায়িত হতে শুরু করলে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রদের লেখাপড়ার সর্বনাশ হবে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার স্কুল। পুজো এসে গেল, এখনও হাজারে হাজারে সিট ফাঁকা কলেজগুলোতে। ছাত্ররা বিপুল আকারে ড্রপ আউট হচ্ছে, লেখাপড়ার আঙিনায় তারা আর আসছে না’।
এই সবই ঘুরপথে এই শিক্ষানীতির নেতিবাচক প্রভাব বলে কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারকেই আক্রমণ করেন সৃজন। সাম্প্রতিক অতীতে বাম আন্দোলনের সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে ছাত্র এবং যুব সংগঠনকে। সেই ধারাকে বজায় রেখে এবার মিড ডে মিল থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষাক্ষেত্রের অন্যান্য দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যজুড়ে সুর চড়াতে শুরু করেছে এসএফআই।
আরও পড়ুন: Governor CV Ananda Bose: ‘আচার্য বিলে কেন সই নয় রাজ্যপালের’? আদালতে যাচ্ছেন প্রাক্তন উপাচার্যরা!
জাতীয় শিক্ষানীতির প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরেই বার বার পথে নেমেছে বাম ছাত্র সংগঠন। এই সদ্যসমাপ্ত মিছিলগুলতে জাতীয় শিক্ষানীতির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি।
এসএফআই-এর অভিযোগ, ছাত্র ইউনিয়নগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও গায়ের জোরে সেগুলো দখল করে রেখেছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন। তাদের আরও অভিযোগ অ্যাডমিশন থেকে ফেস্ট, সর্বত্রই কাটমানি-দুর্নীতির অবাধ উপস্থিতি রয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সময়কালে।
এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির মন্তব্য। ছাত্র সংসদ নির্বাচন করানোর পক্ষে হাইকোর্টের বিচারপতির বক্তব্যকে হাতিয়ার করে অবিলম্বে ছাত্রভোটের তারিখ জানানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে তারা।
প্রায় প্রতিটি জেলার এই কর্মসূচীকে হাতিয়ার করে বাম আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে তারা। এই কর্মসূচীগুলিতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রাজ্য ও সর্বভারতীয় স্তরের শীর্ষনেতারা।
জানা গিয়েছে পুজোর পরেই সম্মেলন শুরু হবে এসএফআই-এর অন্দরে। মনে করা হচ্ছে এই সম্মেলনের মরসুম শুরুর আগেই রাজ্যজুড়ে পথে নেমে নিজেদের সংগঠনের অবস্থান এবং সক্রিয়তা বৃদ্ধির বিষয়টি আঁচ করে নিলেন প্রতীকউর-সৃজনরা।
কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য শিক্ষা নীতি
২০২০ সালে প্রথম জাতীয় শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন আনে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনবছরের মাথায় অগস্টে পাঠ্যক্রমের কাঠামো ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। পাঠ্যক্রমের কাঠামোয় একাধিক রদবদলের কথাও জানায় তাঁরা।
২০২৪ সালের শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে পাঠ্যবই তৈরি করা হবে। শিক্ষার্থীরা যেন প্রস্তুতির জন্য বেশি সময় পায়, সেজন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ২০২০ সালে চালু হওয়া জাতীয় শিক্ষা নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে কর্ণাটকের পাশাপাশি নিজস্ব রাজ্য শিক্ষা নীতি প্রবর্তন করেছে বাংলা।
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: জনসংযোগ, পুজো উদ্বোধনে এবার অভিষেক…
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষা নীতি ২০২৩ একটি বাধ্যতামূলক ত্রি-ভাষা পথ গ্রহণ করেছে। পাশপাশি স্কুল ছাত্রদের জন্য ইন্টার্নশিপের সুযোগ সৃষ্টি এবং সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর উন্নতির উদ্যোগ সহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন করেছে।
এই নীতিটি ৭ অগস্ট রাজ্য মন্ত্রীসভার অনুমোদন পেয়েছে। NEP 2020-এর বিভিন্ন দিকগুলির সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটির বিশেষ মিল রয়েছে। যেমন স্কুলগুলিকে একীভূত করার প্রক্রিয়া, চার বছরের স্নাতক প্রোগ্রামের প্রবর্তন, এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের উপর জোর দেওয়া। এর পাশাপাশি রাজ্য শিক্ষা নীতি ২০২৩-র তার নিজস্ব কিছু অনন্য উপাদান রয়েছে।
এটি NEP 2020 দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য একই সময়সীমা মেনে চলার পাশাপাশি জাতীয় স্তরের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন রাজ্যস্তরের সংগঠন তৈরির কথা বলেছে যেমন একটি জাতীয়-স্তরের একাডেমিক ব্যাংক অফ ক্রেডিট এবং একটি জাতীয়-স্তরের গবেষণা তহবিল।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)