বাঁকুড়ায় বেড়ানোর কথা উঠলে সবার আগে মনে পড়ে মুকুটমণিপুরের নাম। জল, জঙ্গল আর পাহাড় ঘেরা এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হাতছানি দেয় ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিকে। ডেভেলপমেন্ট অথরিটির হাত ধরে কয়েক বছরে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্রটি। হাল ফিরেছে রাস্তাঘাটের। উন্নত মানের আলোয় সাজানো হয়েছে কংসাবতীর পাড় বরাবর কয়েক কিলোমিটার রাস্তা। আকর্ষণ বাড়িয়েছে জলাধারের পাড়ে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে রঙিন পথচিত্র। দু’পাশে সারি সারি স্টলে চোখে পড়ে হস্তশিল্পের সম্ভার।
শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছে পার্ক। জলাধারের পাড়ে পিতৃপাহাড়ে তৈরি করা হয়েছে ভিউ পয়েন্ট ‘মুসাফিরানা’। সেখানকার ওয়াচ টাওয়ার থেকে দূর পর্যন্ত প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সেখান থেকে সামান্য এগিয়ে গেলেই পরেশনাথ। টিলার উপর খোলা আকাশের নীচে রয়েছে বিশালাকার শিবলিঙ্গ। ওই পথেই নৌকা করে নদী পেরিয়ে আবার পৌঁছে যাওয়া যায় বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্কে। যেখানে দেখা মেলে হরিণের। মুকুটমণিপুরে কংসাবতীর নীল টলটলে জলে নৌ বিহারও বেশ রোমাঞ্চকর।
এ বছর ড্যামে জলও রয়েছে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। সেই মুকুটমণিপুরকেই এবার পুজোয় ডেস্টিনেশন করেছেন অনেকে। হোটেল, লজগুলিতে ইতিমধ্যে বুকিংও হয়ে গিয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। মুকুটমণিপুর হোটেল মালিক সংগঠনের সভাপতি সুদীপ সাহু বলেন, ‘রুমের জন্য এক মাস আগে থেকেই বুকিং শুরু হয়েছে। পুজোয় ২০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে।
ইতিমধ্যে সেই বুকিং প্রায় ৭০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এখনও কিছু রুম খালি আছে। বুকিংও চলছে। অনেকেই ফোন করছেন রুমের জন্য। আশা করছি ১০০ শতাংশ বুকিং হয়ে যাবে।’ অন্যান্য বারের মতো এবারও পুজোয় মুকুটমণিপুরের বিভিন্ন হোটেলে খাবারের মেনুতে থাকছে বিভিন্ন ধরনের পদ। ড্যামের ভ্যারাইটি মাছও মিলবে মেনুতে।
মুকুটমণিপুর থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে অম্বিকানগর গ্রাম। সেখানে রয়েছে রাজবাড়ির পুজো। ওই রাজবাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। হাতে খানিকটা সময় নিয়ে সেই রাজবাড়ির পুজো উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।
জঙ্গলে ঘেরা দক্ষিণ বাঁকুড়ার সুতান, তালবেড়িয়া জলাধার, ঝিলিমিলিও পর্যটকদের পছন্দের জায়গা। ঝিলিমিলিতে থাকার জন্য রয়েছে সরকারি প্রকল্পের গেস্ট হাউস, কটেজ ও ট্রি-হাউস। সেখানেও পুজোর ক’টা দিন বুকিং রয়েছে ভালো। এখনও বুকিং চলছে বলে জানা গিয়েছে।
জেলার ঐতিহাসিক শহর বিষ্ণুপুরও পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় জায়গা। এখানে শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মল্লরাজাদের স্মৃতি ও স্থাপত্য। যার অন্যতম হলো রাসমঞ্চ। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য টেরাকোটার মন্দির, মাকড়া পাথরের তৈরি গড়দরজা, গুমগড়। রয়েছে দলমাদল কামান। লালবাঁধের প্রাকৃতিক পরিবেশও মনোরম। এছাড়া দেবী মৃন্ময়ীর মন্দির, ছিন্নমস্তা মন্দির, পুরাবস্তুর সংগ্রহশালাও ঘুরে দেখার মতো। বিষ্ণুপুরের নিজস্ব ঘরানার প্রাচীন সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়টিও রয়েছে এই শহরেই।
এই বিষ্ণুপুরেই আবার তৈরি হয় বিখ্যাত বালুচরি শিল্ক। তৈরি হয় আরও নানা হস্তশিল্প। এবারও পুজোয় বেড়ানোর জন্য মন্দিরনগরীকে ডেস্টিনেশন করেছেন অনেকে। সেই মতো অনেকে হোটেল, লজে রুমও বুক করে ফেলেছেন। বিষ্ণুপুর লজ হোটেল মালিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক অসিতকুমার চন্দ্র বলেন, ‘পুজোর বুকিং মোটামুটি হয়েছে, এখনও চলছে। এখনও হোটেলের কিছু রুম খালি আছে। অনেকেই আসার আগ্রহ নিয়ে ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন, বুকিংও করছেন।’ বাঁকুড়ার শুশুনিয়াতেও হোটেল, লজে ভালো বুকিং রয়েছে।
রাজ্য পর্যটনের সব খবর নখদর্পণে চান। ক্লিক করুন এই সময় ডিজিটাল-এর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে