দু’ইউনিট রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়েছিল পরিবারকে। স্ত্রীর জন্য তড়িঘড়ি এ পজ়িটিভ গ্রুপের দু’ইউনিট রক্ত জোগাড় করে এনেছিলেন ঘোলার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ রায়চৌধুরী। কিন্তু পরদিন নার্সিংহোমে স্ত্রীকে দেখতে গিয়ে তাঁর নজরে আসে, বেডে রীতিমতো ঠান্ডায় কাঁপছেন স্ত্রী। আর তাঁর আনা এ পজ়িটিভ রক্ত নয়, স্ত্রীকে দেওয়া হচ্ছে বি পজ়িটিভ রক্ত!
পরবর্তী সময়ে সেটা সরিয়ে দেওয়া হলেও এবং স্ত্রী সুস্থ হয়ে নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পেলেও নার্সিংহোমের গাফিলতিতে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত যে কোনও সময়েই। তাই ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। সাড়া মেলেনি। এরপরে তিনি ক্রেতাসুরক্ষা ফোরামের দ্বারস্থ হন।
২০১৪-এর সেই ঘটনায় প্রায় ন’বছর মামলা চলার পরে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মনোজিৎ মণ্ডল, সমীক্ষা ভট্টাচার্য ও শ্যামলকুমার ঘোষের বেঞ্চ এই ঘটনায় নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে মামলাকারীর হাতে ১০ লক টাকা ক্ষতিপূরণ তুল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি মামলার খরচ বাবদ আরও ২০ হাজার টাকা দিতে হবে নার্সিংহোমকে। এই মামলার শুনানি চলাকালীন ক্রেতাসুরক্ষা ফোরামে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।
তাঁদের যুক্তি ছিল, ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়নি ওই প্রসূতিকে। তা ছাড়া ভুল রক্ত দেওয়ার জন্য হাসপাতালের বেডে শুয়ে ওই প্রসূতি ঠান্ডায় কাঁপছিলেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা-ও সঠিক নয়। ওই কাঁপুনি ছিল অ্যানাস্থেশিয়া প্রয়োগের ‘আফটার এফেক্ট’ হিসেবে। যদিও প্রসেনজিতের তরফে আদালতে যুক্তি দেওয়া হয়, গাফিলতির পরেও ক্রমাগত দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে নার্সিংহোম।
ক্রেতাসুরক্ষা ফোরামে জমা দেওয়া নথি দেখে আদালত জানায়, বেড-হেড টিকিটের পিছনে স্পষ্ট লেখা ছিল, ‘মিসম্যাচড ব্লাড ট্রান্সফিউশন’-এর বিষয়টি। বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নাল ও ডিকশনারি ঘেঁটে বেঞ্চ এও জানায়, ভুল রক্ত দেওয়ার জেরে জ্বর হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়ে থাকার সম্ভাবনা জোরালো বলে মনে করেছে রাজ্য ক্রেতাসুরক্ষা ফোরাম।