পুজোর ক’টাদিন পাড়ার মণ্ডপেই দেখা যেত সদাহাস্য ছেলেটাকে। গুরুজনদের সময় দেওয়া, হাসি-ঠাট্টা গল্প, খাওয়া-দাওয়া, পুজোর দায়িত্ব পালন সব কিছুতেই অংশ নিত নীলাদ্রি। ‘গুড বয়’ ইমেজে সকলের প্রিয়পাত্র ছিল সিংহ বাড়ির ছোট ছেলে। মে মাসের ২৪ তারিখের সেই ভয়াবহ রাত সবকিছু ওলটপালট করে দেয়। বাবার দোকানে ডাকাত দলকে বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারায় নীলাদ্রি। তরতাজা যুবকের মৃত্যুতে আনন্দপুরী এলাকায় এবার পুজোর রং অনেকটাই ফিকে।
শোকাচ্ছন্ন পরিবার
ব্যারাকপুর আনন্দপুরী এলাকায় সিংহ জুয়েলার্সে ডাকাতি করতে আসা দুষ্কৃতীদের বাধা দিতে গিয়ে নীলাদ্রিকে প্রাণ দিতে হয়। সিংহ বাড়ির সামনেই আনন্দপুরী সার্বজনীন দুর্গাপুজো সমিতির পুজো। এ বছর ৪৬ তম বর্ষ। তবে পাড়ার ছেলের এহেন পরিণতিতে সকলেই এবার মর্মাহত। ছেলের স্মৃতি বুকে আঁকড়ে নিস্তব্ধ সময় কাটাতে শিলিগুড়িতে আত্মীয়ের বাড়ি চলে গিয়েছেন বাবা।
বাবার সঙ্গে দায়িত্ব ভাগ
নীলাদ্রির বাবা নীলরতন সিংহরা চার ভাই। বড় ভাই মারা গিয়েছেন। এখন তিন ভাই। নীলাদ্রির জ্যেঠু বিদ্যাপতি সিংহ জানালেন, নীলাদ্রি সকল ভাইবোনদের মধ্যে ছোট ও শান্ত ছেলে ছিল। পড়াশোনায় ভালো ছিল। চাকরি করতে বলা হলেও সে রাজি হয়নি। বছর দুয়েক ধরে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করতো। বাবার ব্যবসাকে আরও বড় করার স্বপ্ন ছিল ওঁর চোখে। কে জানবে এই পরিণতি হবে নীলাদ্রির?
নীলাদ্রি ছাড়া পুজো ভাবাই যায় না
নীলাদ্রি বাবা পুজোর সময় এই বাড়িতে থাকতে পারবেন না বলে শিলিগুড়িতে চলে যায় আত্মীয়ের বাড়িতে। বাড়িতে থাকলেই তো নীলাদ্রির কথা মনে পড়বে! জ্যেঠু জানান, পুজোর সময় নীলাদ্রি এই পুজো মণ্ডপেই থাকতো। নীলাদ্রি পুজো মণ্ডপে সবার সঙ্গে মিশে আনন্দ করত। সব কাজ করতো, প্রতিমা আনতে যেত। এই পুজো নীলাদ্রি ছাড়া অংশগ্রহণ করা সিংহ পরিবারের কাছে কঠিন ব্যাপার।
ভাইয়ের আঁকা ছবিগুলো রয়ে গেল
ভাইয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন দাদাও। নীলাদ্রির বড় জ্যেঠুর ছেলে সুশান্ত সিনহা জানান, ভাই সকলের প্রিয় ছিল। নীলাদ্রি পড়াশোনায় যেমন ভালো ছিল। তেমন কোনও বন্ধু-বান্ধব আড্ডা কিছুই ছিল না। তবে নীলাদ্রি আঁকতে খুব পছন্দ করত। সুশান্ত বলেন, ‘আমার ঘরে এমন অনেক চিত্র আছে, যা নীলাদ্রির হাতে আঁকা। পুজোতে ঠাকুর আনতে যাওয়া, বিসর্জনে যাওয়া, বাবা-মার হাত ধরে। ওঁকে ছাড়া পুজো ভাবতেই পারছি না।’
দোষীরা শাস্তি পাক
নীলাদ্রি চলে যাওয়ার পর থেকে মন খারাপ পাড়ার সকল বাসিন্দাদের। স্থানীয় লোকজনও এই ঘটনাকে মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তি চায়। এমন শাস্তি যেন হয়, যা দেখে দুষ্কৃতীরা এমন অপরাধমূলক কাজ করবার আগে দুবার ভাববে এমনটাই জানালেন নীলাদ্রির পাড়ার কাকু-কাকিমারা।
শারদ উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষা! দুর্গাপুজোর সমস্ত খবর-ছবি-ভিডিয়োর জন্য ক্লিক করুন এখানে