দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিভাগীয় তদন্ত চলছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তার মধ্যেই পিঠ বাঁচাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের আমলাগড়া কংসাবতী সার্কলের রেভিনিউ ডিভিশন (১) অফিসে তাঁর পুরোনো দফতরে পৌঁছে আলমারি খুলে ফাইল সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। লাভ হয়নি। গত ৬ অক্টোবর হাতেনাতে ধরা পড়ে যান বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল রেভিনিউ ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত রেভিনিউ অফিসার শুভাশিস রানা। সেই ঘটনাটি প্রথম সামনে আনে ‘এই সময়’।
এবার ওই সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানায় এফআইআর দায়ের করলেন আমলাগড়া কংসাবতী সার্কলের বর্তমান রেভিনিউ অফিসার সঞ্জিত তরফদার। শুভাশিসের বিরুদ্ধে সরকারি অফিস থেকে নথি পাচারের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় সেচ দফতরের ‘জল সম্পদ’ ভবনে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, শুভাশিস রানার বিরুদ্ধে নতুন করে উচ্চ পর্যায়ের আরও একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।
সাসপেন্ডও করা হতে পারে তাঁকে। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া চেয়ে সেচ দপ্তরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি প্রভাত কুমার মিশ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। যদিও তিনি জানিয়েছেন, এখনও তিনি এমন ঘটনার ব্যাপারে কিছু জানেন না। এর আগে কংসাবতী সার্কলের রেভিনিউ ডিভিশন (১)-এ রেভিনিউ অফিসার হিসেবেই দীর্ঘ দিন কর্মরত ছিলেন শুভাশিস রানা। সে সময়ে গাড়ির ভুয়ো বিল তৈরি করে প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকা প্রতারণার মতো তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
সেচ দফতরের সচিবের নির্দেশে শুরু হয় বিভাগীয় তদন্ত। তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে বলে ওই অফিসারকে বদলি করা হয় বর্ধমানের দামোদর ক্যানাল রেভিনিউ ডিভিশনে। এখানে আসার পরেও তাঁর নানা কাজকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এই ডিভিশনের শীর্ষ আধিকারিক থেকে গ্রুপ ডি স্তরের কর্মীরা। লিখিত ভাবে তাঁরা ঘটনার কথা জেলাশাসক-সহ সেচ দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকদের জানান। এরই মধ্যে এখানেও তাঁর বিরুদ্ধে গাড়ির বিলে কারচুপির অভিযোগ জমা পড়ে জেলাশাসকের কাছে।
এসবের মধ্যেই গত ৬ অক্টোবর বিকেলে আমলাগড়া কংসাবতী সার্কলে নিজের পুরোনো অফিসে যান শুভাশিস। বর্তমান রেভিনিউ অফিসারের অনুপস্থিতির সুযোগে আলমারি খুলে গাড়ির লগবুক, বালি সংক্রান্ত ফাইল তাঁর সঙ্গে থাকা গাড়িতে তুলতে থাকেন। তখনই দপ্তরের অন্য কর্মীদের হাতে ধরা পড়ে যান তিনি। সেই অপরাধের কথা স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে শুভাশিস ক্ষমাও চান সেচ দপ্তরে জেলার শীর্ষ আধিকারিকদের কাছে।
এর পরেই গত ১০ অক্টোবর গড়বেতা থানায় শুভাশিস রানার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কংসাবতী সার্কলের বর্তমান রেভিনিউ অফিসার সঞ্জিত তরফদার। এত কিছুর পরেও ১১ তারিখ বর্ধমানে নিজের অফিসে আসেন শুভাশিস। ততক্ষণে ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত খবরের জেরে ঘটনার কথা অফিসের সকলেরই জানা। প্রতিবাদে তাঁর চেম্বারে ঢোকার মুখে দেওয়ালে পোস্টার পড়ে।
তাতে লেখা, ‘চোর রেভিনিউ অফিসারের এই অফিসে কোনও জায়গা নেই।’ তার পর আর অফিসে আসেননি শুভাশিস। আমলাগড়া কংসাবতী সার্কলের রেভিনিউ ডিভিশন (১)-এর এক আধিকারিক বলেন, ‘সেদিন শুভাশিস যখন ফাইল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল তখন আমাদের অফিসের কয়েকজন স্টাফ ওকে আটকানোর চেষ্টা করে। গাড়িতে বসেই ও চালককে তখন বলে— ওদের উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে চল। মারা গেলে যাবে।’
ওই আধিকারিক আরও বলেন, ‘একেবারে ফেরোসাস হয়ে উঠেছিল সেদিন। কোনও ভাবে আটকানো না-গেলে ও পালিয়ে যেত।’ গড়বেতা থানায় অভিযোগেও একই কথা লিখেছেন কংসাবতী সার্কলের বর্তমান রেভিনিউ অফিসার সঞ্জিত তরফদার। এদিকে, বর্ধমানে দামোদর ক্যানাল রেভিনিউ ডিভিশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘শুভাশিসের আচার-আচরণের মধ্যেই একটা ডোন্ট কেয়ার মনোভাব রয়েছে। অফিসে সিনিয়রদের কথা শুনে কাজ করে না। কী ভাবে অসৎ পথে রোজগার করবে সেটাই ছিল ওর একমাত্র চিন্তা।’