শিক্ষক নিয়োগে ওএমআরে কারচুপির অভিযোগে তোলপাড় চলছে পশ্চিমবঙ্গে। এই নিয়ে সিবিআই-ইডির তদন্তের জেরে শিক্ষা দফতরের বেশ কয়েক জন কর্তাব্যক্তি গ্রেফতারও হয়েছেন। সম্প্রতি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে ওএমআর কেলেঙ্কারির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির দু’জন শীর্ষ কর্তাকেও গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আর এই গ্রেফতারি নিয়ে এখন ঘোর চিন্তায় ঝাড়খণ্ড সরকারও।
কারণ, এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি ঝাড়খণ্ড অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের (জেএসি) আওতায় সরকারি স্কুলে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলের প্রস্তুতির সঙ্গেও জড়িয়ে। পরীক্ষা-পর্বে ছাত্রছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে মার্কস ট্যাবুলেশন, ওএমআর শিট সরবরাহের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এরা যুক্ত।
বুধবার ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন অনিলকুমার মাহাতোর সঙ্গে। তিনি এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির কর্তাদের সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারির কথা শুনে হতবাক। এই ঘটনা নিয়ে নানা জরুরি আইনি নথির প্রতিলিপিও তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়।
সব দেখেশুনে তিনি বলেন, ‘আমাকে একটু সময় দিন। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এ তো চমকে যাওয়ার মতো ব্যাপার।’ পরে তিনি ফোনে জানান, জেএসি ঝাড়খণ্ড সরকারেই একটি সংস্থা। ঝাড়ণ্ড অ্যাকেডেমিক কাউন্সিল অ্যাক্ট ২০০৩-এর সংশোধনী বলবৎ হওয়ার পরেই কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল। কাউন্সিল চালু হওয়ার পর গোড়া থেকেই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত।
অনিলবাবু বলেন, ‘আমি কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন হিসাবে ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে দায়িত্বে রয়েছি। এ যাবৎ ওই সংস্থা নিয়ে কোনও অভিযোগ শুনিনি। আমার আসার আগে থেকেই ওরা কাজ করছিল।’ তাঁর সংযোজন, ‘ওই সংস্থার কর্তারা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর আমাদেরও অনুসন্ধান করতে হবে। কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’
সংস্থাটি এখন ঝাড়খণ্ড সরকারি স্কুলগুলির পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজ করছে বলে তিনি জানান। তাঁর কথায়, ‘ফলে এই মুহূর্তে ওই সংস্থাকে অপসারণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাতে পরীক্ষাপদ্ধতি ব্যাহত হতে পারে।’ সিবিআই তদন্তের জেরে সংস্থাটির সার্ভার তথা ডেটা ব্যাঙ্কের কী হাল হতে চলেছে– তা নিয়ে উদ্বেগে তিনি।
কারণ, তদন্তের সূত্রে অনেক ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সার্ভার/তথ্যভাণ্ডর তদন্তকারী সংস্থা বাজেয়াপ্ত করে বা লক করে দেয় বলে দৃষ্টান্ত রয়েছে। অনিলবাবুর বক্তব্য, ‘যদি আমাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনও পুরোনো তথ্য-পরিসংখ্যানের দরকার হয়, তখন কী ভাবে কী করা যাবে–তা নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে।’
অনিলবাবু বলেন, ‘শুধু কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বা ঝাড়খণ্ড নয়, বিহার, অসম-সহ মোট সাতটি রাজ্যে এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা-পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত।’ সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ওএমআর কেলেঙ্কারির জেরে বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।