ফের কাকভোরে ‘বাইট’ দেওয়া শুরু করেছেন তিনি। আর তাতে ঘুম ছুটেছে বিজেপির অনেকের। কে জানে, দিলীপ ঘোষ আবার কী বোমা ফাটালেন! গত জুলাইয়ে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ খুইয়েছেন দিলীপ। তারপর থেকে তিনি চুপচাপই ছিলেন। প্রাতর্ভ্রমণে বেরোতেন ঠিকই, কিন্তু সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতেন সচেতনভাবে। মুখের সামনে সংবাদমাধ্যম বুম ধরলেও তিনি রা কাড়তেন না।
নিজের লোকসভা কেন্দ্র মেদিনীপুরের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। কিন্তু সপ্তাহখানেক হলো তিনি ফের স্বমহিমায়। আগের মতোই রেখেঢেকে কথা বলার ঘোর বিরোধী দিলীপ। তাঁকে চেনা ছন্দে ফিরতে দেখে খুশি দিলীপের অনুগামীরাও। দলের বিক্ষুব্ধদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা থেকে অমিত শাহের কলকাতা সফরের খবর তাঁর না জানা—সবই দিলীপ বলেছেন প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে।
দিলীপের আবার ‘ফ্রন্টফুটে’ খেলতে শুরু করার বিষয়টি ভাবাচ্ছে বঙ্গ-বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরকে। এমনিতেই তারা দলের অন্দরের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। তার উপর দিলীপের ফর্মে ফেরাটা রাজ্য বিজেপির পদাধিকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দিলীপ অবশ্য নিজেই স্পষ্ট করেছেন তাঁর ‘স্পিকটি নট’ অবস্থান থেকে সরে আসার কারণ।
মেদিনীপুরের সাংসদের কথায়, ‘আমি যা বলছি, দলের স্বার্থে বলছি। দলীয় কর্মীদের স্বার্থে বলছি। তাতে যদি কারও কষ্ট হয়, আমার কিছু করার নেই।’ তাঁর সংযোজন, ‘আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখেছিলাম। কারণ, পার্টির কোনও পদে আমি আর নেই। কিন্তু কর্মীদের কথা ভেবে আমাকে মুখ খুলতেই হচ্ছে। তাঁদের কিছু ক্ষোভ আছে। সেগুলি চিহ্নিত করা হয়নি, তাই বিক্ষোভের চেহারা নিচ্ছে। এই ঘটনাগুলি বিজেপির ভাবমূর্তি খারাপ করছে। তাই দলের স্বার্থে কিছু কথা বলছি।’
দিলীপের ‘কিছু কথা’ শোনার জন্য কাকভোরে উঠে পড়ছেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ সাংগঠনিক নেতারা। হোয়াটসঅ্যাপে ফরোয়ার্ড হওয়া দিলীপের প্রাতর্ভ্রমণের সময়কার ‘বাইট’ তাঁর শুনছেন চোখ ডলতে ডলতে। কারণ, দিলীপ দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের বিরুদ্ধে ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু বললে তার ‘কাউন্টার বাইটও’ যে ছকে রাখতে হবে।
বঙ্গ-বিজেপির এক পদাধিকারীর কথায়, ‘দিলীপবাবু কখন কাকে কাঠগড়ায় তুলে দেবেন সেটা আগেভাগে আঁচ করা কঠিন। সুকান্ত মজুমদারকে উনি প্রকাশ্যেই শিক্ষানবীশ রাজ্য সভাপতি বলেছিলেন। শুভেন্দু অধিকারীর তারিখ রাজনীতি নিয়েও কটাক্ষ করেছিলেন। জানতে ইচ্ছে করে, এ সবও কি দলের স্বার্থে?’
দিলীপপন্থী এক বিজেপি নেতার পালটা যুক্তি, ‘নেতা নয়, কর্মীরাই দলের সম্পদ। কেউ কোনওদিন শুনেছেন, উনি বিজেপি কর্মীদের সমালোচনা করছেন। অথচ সুকান্ত মজুমদার বিক্ষুব্ধ কর্মীদের পার্টি থেকে সাসপেন্ড করার পরিকল্পনা করেছেন। আর শুভেন্দুবাবু প্রতিবাদী কর্মীদের গায়ে তৃণমূলের তকমা সাঁটার চেষ্টা করছেন। এখানেই আসল ফারাক।’
রাজ্য বিজেপির কোনও শীর্ষ নেতাই দিলীপের মতো ভোর পাঁচটায় উঠে পার্কে জগিং করতে যান না। কিন্তু ইদানীং ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে তাঁদেরও সাতটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়তে হচ্ছে। দিলীপ ঘোষের বাইটের ভিডিয়ো ফরওয়ার্ড হওয়ার টাইম হয়ে গেল যে।