Durga Puja 2023 : ওঁদের পুজো অন্য রকম, পুজোয় ওঁরা বড্ড একা – mental illness suffering many people this durga puja crowd association like curse


এই সময়: উৎসবের আবহে ওঁরা বড্ড একা। কেউ একা মানসিক কারণে, আর কেউ একা পরিস্থিতির শিকার হয়ে। কারও কারও একাকিত্ব নেমে এসেছে হঠাৎ স্বজন বিয়োগ অথবা অসুস্থতার জন্য। পুজোর এই বিপুল আয়োজনেও তাই ওঁদের অনেকের কাটবে পুরোপুরি নিভৃতে। অনেকেই পুজো কাটাবেন চার দেওয়ালের মধ্যে। তাই পুজোর হুল্লোড়ে এই মানুষগুলোর আরও বেশি করে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

মনের রোগে আক্রান্ত বহু মানুষের কাছেই পুজোর এই ভিড়, কলরব, মেলামেশা অভিশাপের মতো। ডিপ্রেশন, অ্যাংজ়াইটি ডিজ়অর্ডার, ওসিডির (ওবেসিভ কম্পালসিভ ডিজ়অর্ডার) মতো মানসিক রোগে আক্রান্তদের অনেকের কাছেই এই কলরব অসহ্য হয়ে দাঁড়ায়। আরজি কর হাসপাতালের মনোরোগের চিকিৎসক রাজর্ষি নিয়োগী জানান, বিদেশে বহু দিনই ইস্টার হলিডে অথবা খ্রিস্টমাসের সময়ে মনোরোগীদের জন্য বিশেষ সাবধনতা নেওয়ার চল রয়েছে।

উৎসবের সমারোহে ভিড়ের থেকে যাঁরা বিচ্ছিন্ন, তাঁরা কেমন আছেন সে ব্যাপারে নিয়মিত সার্ভেও হয়। তবে এ দেশে এমন চল নেই। রাজর্ষির কথায়, ‘ভিড়, হইচই, সবার আনন্দ দেখে এই মানুষগুলোর কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়। সবার আনন্দে আমি নেই—এই ভাবনাটা চেপে বসে। ফলে তার অসুস্থতা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয় রঞ্জন রামের তাই পরামর্শ, ‘ডিপ্রেশন, অ্যাংজ়াইটি, ওসিডিতে ভোগা মানুষজন থেকে একাকী প্রবীণ, স্বজন হারানো মানুষগুলোর খোঁজখবর তাঁদের আশেপাশের মানুষকেই রাখতে হবে। তাঁদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে খুব জরুরি। প্রয়োজনে দিনে একবার ফোন করে খবর নেওয়া, মিশতে না চাইলেও তাঁর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করতে হবে।’ নইলে তাঁরা আরও বিচ্ছিন্ন বোধ করতে পারেন বলে জয় রঞ্জন এবং রাজর্ষি দু’জনেই মনে করেন।

Durga Puja 2023 : ব্রাসেলসে উমার আরাধনায় ভেঙে যায় জাত-লিঙ্গের বেড়া
একাকী প্রবীণের সংখ্যাও এই শহরে কম নয়। এই উৎসবের ব্যাপক আয়োজনে তাঁরা নানা কারণে ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হবেন। যেমন সল্টলেকের সিডি ব্লকের বাসিন্দা স্বপন রায়চৌধুরী। করোনায় স্ত্রী বিয়োগের পর গোটা বাড়িতে ৮০ পার করা স্বপন একাই থাকেন। পুজো কী ভাবে কাটাবেন? স্বপন বলছেন, ‘বন্ধুরাও সব একে একে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। অনেকেই খুব অসুস্থ। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে আমারও আর পুজোয় আলাদা কোনও পরিকল্পনা নেই।’

স্বজন হারানোদের তালিকাটাও নেহাত কম নয়। ওডিশার বাহানাগাতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় প্রিয়জনকে হারানো পরিবারগুলিই হোক অথবা গত বছরের দশমীতে বিসর্জনে গিয়ে মাল নদীর হড়পা বানে ভেসে যাওয়া মানুষগুলোর পরিবারের কাছে এ বছর উৎসব বলে প্রায় কিছু নেই। যেমন মালবাজারের ২ নম্বর ক্যালটেক্স সর্বজনীন পুজো কমিটির কথাই ধরা যাক।

New Jersey Durga Puja 2023: চার দশকের পুরোনো পুজো, নিউ জার্সিতে একখণ্ড বাংলা
গত বছর এই পুজোর প্রতিমা ভাসানে গিয়ে একাধিক মানুষ ভেসে যান হড়পা বানে। সেই পুজো এ বার প্রায় নমো নমো করে হচ্ছে। পুজো কমিটির বক্তব্য, আশেপাশের বহু মানুষ এখনও গভীর শোকে। তাই এলাহি আয়োজনের পথে তারা হাঁটেনি। অবশ্য এ সবের উলটোদিকেও অনেকে আছেন। যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেও উৎসবে সামিল হচ্ছেন অনেকে।

যেমন উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের বাসিন্দা শান্তা দাশগুপ্ত। কয়েক বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও তিনি সেই অসম লড়াইয়ে জিতে এসেছেন। উৎসবে শামিল হয়ে শান্তা বলেন, ‘পুজোর দিনগুলোতে চরম ব্যস্ততার মধ্যে কাটবে। পাড়ার মেয়েরা সবাই মিলে দোকান দিয়েছি। সেখানেই বেশির ভাগ সময় কাটাব। রোগের কথা ভাবব না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *