দুর্গাপুজোর থিম নিয়ে ক্লাবগুলির মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা। সেই আবহেই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চলে বুক স্টল তৈরির কম্পিটিশন। এবং এ বার পুজোয় বইয়ের স্টলের নিরিখেও ‘শাসক’ তৃণমূল। আর হিসেব অনুযায়ী, ‘প্রধান বিরোধী’ সিপিএম। গত এক দশকে বামেদের দাপট হটিয়ে জোড়াফুল শিবিরের স্টলের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। এ বারও কলকাতা পুর-এলাকায় দেড়শোর বেশি স্টল করছে তারা।
কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই রাজ্যের শাসকদলের অন্তত একটি স্টল তো হবেই, কোনও কোনও ওয়ার্ডে থাকবে একাধিকও। আর ২০১১-য় ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কলকাতা-সহ রাজ্যে বামেদের বুক স্টল এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গিয়েছিল। কলকাতায় তো এক সময়ে তা নেমে যায় ১০০-র নীচে। সে জায়গা থেকে কিছুটা জমি উদ্ধার করে বছর কয়েক আগে শতাধিক বুক স্টল দেয় সিপিএম।
এ বছর দলের কলকাতা জেলা কমিটির অন্তর্গত এলাকায় ১১৪টি স্টল করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তাই খানিক সুদূরপ্রসারী তুলনা টেনেই কেউ কেউ বলছেন, পুজোয় বুক স্টলের দৌড়ে যেন ‘প্রধান বিরোধী’ হয়ে উঠেছে সিপিএম। আর কেমন ‘পারফর্ম্যান্স’ বিজেপি-র? মহানগরে তাদের স্টল কিন্তু হাফ সেঞ্চুরির ধারেকাছেও পৌঁছয়নি। ২০১৯-এর পর গেরুয়া শিবিরের দলীয় পত্রপত্রিকা, বই বিক্রি নিয়ে উৎসাহ ভালোই বেড়েছিল।
এখন তা ঝিমিয়ে পড়েছে অনেকটা। অথচ বিধানসভায় বামেরা এখনও শূন্য হলেও কলকাতায় জোড়াসাঁকোর মতো বিজেপির প্রভাব থাকা তল্লাটেও স্টলের সংখ্যা বাড়িয়েছে তারা। কলকাতায় সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে রামমন্দিরের আদলে মণ্ডপ নিয়ে তো প্রবল হইচই গেরুয়া শিবিরের। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তার উদ্বোধন করে গিয়েছেন। সে জায়গায় বিজেপির দু’টি সাংগঠনিক জেলা মিলিয়ে মেরেকেটে ২৫-৩০ টি স্টল হচ্ছে বলে জানান দলেরই অফিস সম্পাদক প্রণয় রায়।
এ ছাড়া সঙ্ঘ পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা সংগঠনগুলি কিছু স্টল করতে চলেছে। কিন্তু সব মিলিয়েও দৌড়ে আর থাকতে পারছে কই! এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যাদের কোনও ভূমিকা নেই, যাদের কোনও বিপ্লবী আইকন নেই, তাদের বইপত্র থাকবে কী করে! ওদের বই নেই, লোক নেই, তাই বইয়ের স্টলও নেই।’
প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রভাব কি অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতো বুক স্টলের সংখ্যাতেও পড়ছে? মুখে কুলুপ নেতাদের। কী বই থাকছে বিজেপির স্টলগুলিতে? প্রণয়ের কথায় , ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, দীনদয়াল উপাধ্যায়দের রচনা থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ন’বছরের উন্নয়নের খতিয়ান সংবলিত বইপত্র থাকবে।’
হিসেব বলছে, এসইউসিআই (সি)-র স্টলের সংখ্যাও পদ্ম শিবিরের থেকে অনেক বেশি। বৃহত্তর কলকাতায় তারা কম-বেশি ১১০ টি স্টল করছে। দলের পলিটব্যুরো সদস্য অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘বরাহনগর থেকে সোনারপুর পর্যন্ত এলাকায় আমাদের স্টল শেষ পর্যন্ত ১১০ ছাড়াতে পারে।’
সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদারের বক্তব্য, ‘এ বছর কলকাতায় ছ’টি স্টল বেড়েছে। বাগবাজার, যাদবপুর ৮বি, নেতাজিনগর, কলেজ স্ট্রিটেও বড় স্টল হবে।’ এ ছাড়া এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, সিপিএম মহিলা সমিতি, সিটু আলাদা বইয়ের স্টল করে। সিপিএম ও তার গণ সংগঠনগুলিকে মেলালে কলকাতা পুর-এলাকায় স্টলের সংখ্যা দেড়শোর আশপাশে পৌঁছবে।
বামেদের স্টল-বৃদ্ধি নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘সিপিএম চিরকালই স্টল করে। তবে ওদের স্টলে বই বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমেছে। লোক সমাগমও কমেছে আগের চেয়ে।’ তিনি জানান, ‘জাগো বাংলা’র স্টল এ বারও দেড়শো ছাড়াবে। পঞ্চমীতেই চালু হয়ে যাবে স্টলগুলি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত বই সেখানে থাকবে।