জাতপাত, ধর্মান্ধতার বেড়াজাল তাঁকে আবদ্ধ রাখতে পারেনি। তাই দুর্গাপুজোয় পাঁচটা দিন নিজেকে সঁপে দেন মণ্ডপে। তিনি শেখ হালিম। মেদিনীপুর শহর লাগোয়া কেরানিচটি এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি মেদিনীপুর শহরের খাপ্রেলবাজার উন্নয়ন কমিটির দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত। বলা ভালো, তাঁকে ছাড়া অচল পুজো উদ্যোক্তারা।
সারা দিন হইচই, ঠাকুর দেখার ভিড়ে মণ্ডপ থাকে জমজমাট। কিন্তু রাত ঘন হলে, কে জাগবে ছোট্ট পুজোয়? কে-ই বা খেয়াল রাখবে জাগপ্রদীপের? যেন নিভে না যায় অটল শিখা? আর বাসি মণ্ডপ ঝাড়ু দিয়ে কে-ই বা সাফ করবে? চিন্তা নেই উদ্যোক্তাদের। শেখ হালিম আছেন তো। শেষ রাতের পাহারাদার তিনি।
আবার বাসি মণ্ডপ নিজে হাতে সাফ করতেও ভরসা তিনিই। দুর্গাপুজোর আচার-রীতিনীতি সবই জানা তাঁর। কখন বোধন, কখন সপ্তমীর পুজো, কখন অষ্টমীর অঞ্জলি, কখন শুরু হবে সন্ধিপুজো — সবটাই। দৌড়ঝাঁপ করে ফুল-বেলপাতা জোগাড় করা হোক বা পুজোর সব গুছিয়ে রাখা, হালিম আছেন সব সমাধানের জন্যে।
পুজো কমিটির কর্মকর্তা থেকে এলাকার মানুষের কথায়, ‘যত কাজই থাকুক না কেন, প্রতি বছর পুজোর ক’টা দিন হালিম এই পুজো মণ্ডপেই ব্যস্ত থাকেন। মন-প্রাণ উজাড় করে দেন দুর্গাপুজোয়। রাতে মণ্ডপ পাহারা দেওয়া থেকে সকালে মণ্ডপ চত্বর সাফ করা। ফুল, বেলপাতা, দুর্বাঘাস তুলে আনা থেকে জাগপ্রদীপে সময়ে সময়ে তেল দিয়ে জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্ব পালন, সবই নিজ দায়ত্বে করেন তিনি।
দায়িত্ব দিতে হয় না। কাঁধে তুলে নেন নিজেই। পুজোর সময় এমন লোক কোথায়ই বা পাওয়া যাবে! বছর ৩৮-এর হালিম বলেন, ‘ধর্ম-টর্ম বুঝি না। রাজমিস্ত্রির কাজ করি। ১২ বছর ধরে এই পুজো কমিটির সঙ্গে আছি। পুজোর সময় মণ্ডপেই থাকি। আমার অনেক দায়িত্ব। সেটাই মন দিয়ে পালন করি। পুজোর এক-দেড় মাস আগে থেকে সবাই এত বড় পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত থাকেন।
পুজোর ক’টা দিন মণ্ডপের দায়িত্বটা নিলে ওরা একটু রেহাই পায়। এই কাজ করতে আমারও ভীষণ ভালো লাগে। এটা যদি আমরা সবাই মনে রাখি, তাহলে সমাজে ভেদাভেদ কমবে। তাছাড়া আমি অন্য ধর্মের বলে আমাকে কেউ দূরে সরিয়ে দেয় না তো!’
পুজো কমিটির সম্পাদক দীপক দাস অধিকারী বলেন, ‘২০ বছর ধরে এই পুজো চলছে। এর মধ্যে হালিম এই পুজোর সঙ্গে ১২ বছর যুক্ত। পুজোর কাজে হালিমের নিষ্ঠা শেখার মতো। কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়, তা ও জানে। আমরা এই সম্প্রীতিটা ধরে রাখতে চাই।’