কী অনুষ্ঠান ছিল?
আবির্ভাব তিথির পুন্যলগ্নে সূর্যোদয়ের আগে ভোর তিনটে নাগাদ মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে মায়ের শিলামূর্তি বের করে আনা হয়। মুলোটির মা মৌলাক্ষীর মন্দিরের দিকে বসানো হয় মা তারাকে । এরপর মা তারার মন্দিরের পাশেই অবস্থিত জীবিত কুন্ড ঘাট থেকে জল এনে মা তারা কে স্নান করিয়ে রাজরাজেশ্বরী বেশে সাজিয়ে তোলা হয়। আবির্ভাব তিথির দিন মা তারা উপবাস থাকেন তাই এদিন সারাদিন কোন ভোগ হয় না মা তারার মন্দিরে।
বিশেষ আয়োজন
মা তারা উপোস থাকেন বলে তারাপীঠ এলাকার সেবায়েত থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই এদিন উপবাস করে থাকেন। এই দিন অন্নের পরিবর্তে দেওয়া হয় ফল, লুচি, সুজি দিয়ে ভোগ। সন্ধ্যাবেলায় ফের মূল মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মা তারাকে। সন্ধ্যাবেলায় মূল মন্দিরে নিয়ে যাওয়ার পর মা তারাকে স্নান করিয়ে নবরূপে সাজানো হয় দেবী মূর্তি। রাত্রিবেলায় খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচ রকম ভাজা,শোল মাছ পোড়া,পাঁঠার মাংস দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়
ইতিহাস কী বলছে?
জানা গিয়েছে, কোজাগরী পূর্ণিমার আগের দিন আশ্বিন মাসের শুক্লা চতুর্দশীতে তারাপীঠ মহাশ্মশানে শ্বেত শিমূল বৃক্ষের তলায় বশিষ্ঠ ঋষি দেবীর শিলা মূর্তি পেয়েছিলেন। সেই মূর্তি এক সময় কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে মা তারার স্বপ্নাদেশ পান জয় দত্ত সওদাগর। সেই সময় বাংলার শাসনে থাকা পাল রাজারা ফের নদীগর্ভে থেকে শিলা মূর্তি উদ্ধার করেন এবং আশ্বিন মাসের শুক্লা চতুর্দশীতে মন্দির তৈরি করে শিলা মূর্তিটি পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেন।
জানা যায়, জয় দত্ত নামে ওই বণিক দ্বারকা নদী দিয়ে নৌকায় করে বাণিজ্যে যাচ্ছিলেন। মাঝে তারাপীঠে নৌকা দাঁড় করান। সেখানেই জয় দত্তের পুত্রকে সাপে কাটে। তাঁর মৃত্যু হয়। বণিকের এক ভৃত্য একটি কাটা শোল মাছ রান্না করার জন্য পাশের পুকুরে নিয়ে যান। জলে পড়তেই সেই শোল মাছটি বেঁচে ওঠে এবং জলে চলে যায়। এরপর বণিক তাঁর নিজের পুত্রের দেহকে জলের ধারে নিয়ে আসেন। ছেলেকে পুকুরের জলে স্নান করাতে শুরু করলেই ‘জয় তারা’ বলতে বলতে বেঁচে ওঠে ছেলে। সেই পুকুরই জীবিত কুণ্ড নামে খ্যাত।