Dengue Fever : বেশি ইমিউনিটি প্রাণ নিচ্ছে ডেঙ্গি আক্রান্ত কমবয়সিদের? – high immunity is killing dengue affected young people says experts


অনির্বাণ ঘোষ

ইমিউনিটির ঘাটতি নয়। বরং ইমিউনিটির বাড়াবাড়ি, অতিসক্রিয়তা। ঠিক যেমনটা কোভিডে হয়েছিল। আর সেটাই সম্ভবত অকালে প্রাণ কাড়ছে ডেঙ্গি রোগীদের। ইমিউনিটির অতিসক্রিয়তাই ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে শরীর, যার জেরে এড়ানো যাচ্ছে না প্রাণহানি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সে জন্যই বয়স্ক কিংবা ছোটদের চেয়ে তরতাজা প্রাপ্তবয়স্ক কিংবা মাঝবয়সি ডেঙ্গি আক্রান্তদের ক্ষেত্রে মৃত্যু বেশি দেখা যাচ্ছে রাজ্যে।

অবশ্য শুধুমাত্র ইমিউনিটির আত্মঘাতী চরিত্রই নয়, ডেঙ্গি নিয়ে এই বয়সের বেপোরোয়া মনোভাবকেও বিপদ ডেকে আনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। মহালয়ার ঠিক আগে বহরমপুরের অন্তরা চট্টোপাধ্যায় (৪৩) ও চাকদহের রাজেশ বসু (৩০) ডেঙ্গির বলি হন। ষষ্ঠীর দিন মারা যান সন্তোষপুরের ডেঙ্গি আক্রান্ত মামনি নস্কর (৪৫)। আর বৃহস্পতিবার হাওড়ার নীতু সিংয়ের (৩১) পর ডেঙ্গির সঙ্গে কয়েক দিন যুঝে শুক্রবার সকালে মারা গেলেন এসএসকেএমের অর্থোপেডিক স্নাতকোত্তর পড়ুয়া অনিমেষ মাখি (২৭)।

এমন উদাহরণ আরও অজস্র রয়েছে। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত বেসরকারি মতে যে ৬৮ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৭ জন ষাটোর্ধ্ব, আর হাতেগোনা কয়েকজন শিশু-কিশোর-কিশোরী। বাকি প্রায় সকলেরই বয়স ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টিকে উলটপুরাণ মনে হতে পারে। কেননা, করোনা-সহ অধিকাংশ সংক্রমণের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বয়স ও কো-মর্বিডিটির যুগলবন্দিই সবচেয়ে বেশি প্রাণ কাড়ে।

কিন্তু ডেঙ্গির ক্ষেত্রে এবারে তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। বরং দেখা যাচ্ছে, কোনও শারীরিক জটিলতা ও কো-মর্বিডিটি নেই, তরতাজা এমন তরুণ-তরুণী কিংবা যুবক-যুবতীর মৃত্যু হচ্ছে বেশি। ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় মনে করছেন, ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সিরাই যেহেতু ডেঙ্গিতে বেশি আক্রান্ত হন এবং একই সঙ্গে বেপরোয়া মনোভাবের জন্য জ্বরটাকে হেলাফেলা করেন, তাই অনেক সময়েই আসল চিকিৎসা শুরু হতে এত দেরি হয়ে যায় যে প্রাণসংশয় তৈরি হয়।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অলোকেশ কোলে কিংবা ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানাচ্ছেন, ২০ থেক ৫০ বছর বয়সের রোগীরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। মৃত্যু হচ্ছে এঁদেরই বেশি। যদিও দু’জনেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ডেঙ্গি নিয়ে মাঝবয়সীদের কিছুটা হেলাফেলার মনোভাব ও তার জেরে দেরিতে দেরিতে চিকিৎসা শুরুই মৃত্যুর একমাত্র কারণ নয়। রয়েছে ইমিউনিটির বেয়াড়াপনাও।

অলোকেশ বলেন, ’২০-৫০ বছর বয়সিদের ইমিউনিটি যেহেতু বেশি বা কম বয়সিদের তুলনায় বেশি ভালো, তাই ডেঙ্গি ভাইরাসের প্রতিক্রিয়ায় যখন তা অতিসক্রিয় হয়ে উঠে সেই ইমিউনিটি নিজের শরীরের কোষকেও আক্রমণ করে বসে, তখনও ওই বয়সিদের মধ্যেই সেটা বেশি দেখা যায়। ব্যাপারটা একেবারে প্রাণঘাতী।’

Dengue Fever: রোগীর চিকিৎসা করতে করতেই সব শেষ, SSKM-এ ডেঙ্গিতে মৃত্যু তরুণ চিকিৎসকের
তন্ময় দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সাম্প্রতিক একটি গবেষণার দিকে যেখানে তুলে ধরা হয়েছে, কোভিডের অ্যান্টিবডি যাদের শরীরে বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রেই ডেঙ্গির সংক্রমণ বেশি ঝামেলার। তবে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় বলছেন, ‘এর নেপথ্যে ইমিউনোলজির কোনও ব্যাখ্যা থাকতেও পারে। কিন্তু সেটা ঠিক কী, বলা মুশকিল।’

কেন্দ্রীয় সংস্থা ট্রানস্লেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে হওয়া এই স্টাডিটি অচিরেই গবেষণাপত্রের আকারে প্রকাশিত হতে চলেছে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানপত্রিকায়। ২৪ জন গবেষকের করা সেই স্টাডিতে দাবি করা হয়েছে, ২০২২ সালে সারা দেশে যে যে ৩০৩ জন ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার কিংবা ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোমের জেরে মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশের শরীরেই কোভিড অ্যান্টিবডি অনেক বেশি ছিল।

Dengue Treatment : ডেঙ্গি ঠিক কোন পথে! ডাক্তাররা নাকাল বুঝতেই
তন্ময় মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বেপরোয়া মনোভাব এবং ঘরের বাইরে বেশি বেরোনোর কারণে ২০-৫০ বছর বয়সিরাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বেশি। তাই তাঁদের শরীরেই কোভিড অ্যান্টিবডি বেশি, যা আখেরে ডেঙ্গির সময়ে বাড়াবাড়ি করার জেরেই এই বয়সিদের প্রাণসংশয়ের ঝুঁকি অনেকটা বাড়িয়ে দিচ্ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *