আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে দার্জিলিংয়ের ঘুম গার্লস হাই স্কুলে চালু করা হয়েছে অ্যাটমোস্ফেরিক ওয়াটার জেনারেটর। বাতাস থেকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে এই যন্ত্রে তৈরি হবে পানীয় জল। শুনতে অদ্ভূত লাগলেও হায়দরাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি এমনই এক যন্ত্র তৈরি করেছে। সত্যজিৎ রায়ের গড়া চরিত্র ‘প্রফেসর শঙ্কু’ হয়তো অন্য কোনও নাম দিতেন। তবে নামে কিই বা যায় আসে। আসল তো কাজ।
দার্জিলিংয়ের ঘুম গার্লস হাই স্কুলে সেই অ্যাটমোস্ফেরিক ওয়াটার জেনারেটর চালু হওয়ার পরে টলটলে পানীয় জল এখন পান করছেন স্কুলের শিক্ষিকা থেকে শুরু করে ছাত্রীরা। শীত এবং গরমে জলের উৎস শুকিয়ে গেলে পাহাড়ি শহরগুলোর হালও বেহাল হয়ে পড়ে। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ের বাসিন্দারা এমন একটা যন্ত্রের খোঁজে ছিলেন তা পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে কাজে দেবে।
পাহাড়ে জলের যতই সঙ্কট থাক না কেন, কুয়াশার কোনও অভাব নেই। বাতাসের সেই আর্দ্রতাকে কীভাবে পানীয় জলের সঙ্কট মেটানোর কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে তৎপরতার অভাব ছিল না। কয়েক বছর আগে দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ত এই ব্যাপারে যোগাযোগ করেন ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজির কর্তাদের সঙ্গে। তার পরে স্কুলের প্রয়োজন বুঝে সেই যন্ত্র তৈরি করা হয়। সেই যন্ত্র বসানো হয়েছে ঘুমের ওই মেয়েদের স্কুলে।
হায়দরাবাদের ইন্সস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজির ইঞ্জিনিয়াররা ঘুমে এসে সেই যন্ত্র বসিয়ে দেন। দার্জিলিঙের সাংসদ বলেন, ‘পানীয় জল জোগানের জন্য সমগ্র উত্তরবঙ্গে এই ধরনের যন্ত্র নেই। স্কুলে এই প্রকল্পটি সফল হলে পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে।’
ঘুম গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষ যন্ত্রটি পেয়ে যতটা খুশি ততটাই উদ্বেগে রয়েছেন। স্কুলে এত দিন পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে মাসে প্রায় পনেরো হাজার টাকা খরচ হতো। ছাত্রীদের দেওয়া ফি, শিক্ষিকাদের সাহায্য নিয়ে কোনও রকমে সেই খরচ মেটানো হতো। এখন সেই খরচ বাঁচলেও নতুন যন্ত্রটি বসানোর জন্য স্কুলে ‘থ্রি-ফেজ’ বিদ্যুতের কানেকশন নিতে হয়েছে। ফলে স্কুলের বিদ্যুতের খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
যন্ত্রটির দামও কয়েক লাখ টাকা। পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় এই যন্ত্রটির সাহায্যে পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে হলে সরকারি ভরতুকি দরকার। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রমীলা কারকি বলেন, ‘সিঙ্গল ফেজ লাইন হলে ভালো হতো। তা ছাড়া গরমের সময়ে মার্চ-এপ্রিল মাসে যন্ত্রটি কেমন কাজ করবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে যে পানীয় জল পাওয়া গিয়েছে সেটা অত্যন্ত ভালো মানের।’