Insurance Money : রহস্যমৃত্যুতে বিমার টাকা জমার নির্দেশ – state development family protection forum to finally get the insurance money after almost a century


হিমাদ্রি সরকার

খুন, না আত্মহত্যা? মৃত্যু হলো কী ভাবে? দুর্ঘটনাজনিত আঘাত বা মৃত্যু হলে তার জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিমা করিয়েছিলেন হুগলির তেলেনিপাড়ার আপ্পা রাও। সেটা প্রায় দু’দশক আগে। বিমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু কী ভাবে হয়েছে মৃত্যু? পুলিশি তদন্ত ও ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন টানাপড়েনের পরে বিমা কোম্পানি জানায়, তারা ওই টাকা দেবে না।

রাজ্য ক্রেতাসুরক্ষা ফোরামের নির্দেশে সেই জট কাটিয়ে অবশেষে প্রায় একযুগ বাদে চার লাখ টাকা বিমা কোম্পানির থেকে পেতে চলেছে আপ্পা রাওয়ের পরিবার। দীপা সেন (মাইতি) ও শুভ্রশঙ্কর ভট্টর নেতৃত্বাধীন ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের বেঞ্চ কিছু দিন আগে নির্দেশ দিয়েছে, বিমা কোম্পানিকে দু’মাসের মধ্যে তিন লাখ টাকা দিতে হবে।

সেই সঙ্গে ২০১৬-এর অগস্ট থেকে, অর্থাৎ যে সময়ে বিমা কোম্পানি আপ্পা রাওয়ের পরিবারের আবেদন খারিজ করেছিল, সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত বছরে ৯ শতাংশ হারে সুদও দিতে হবে। এর বাইরেও ওই পরিবারের মানসিক যন্ত্রণার ক্ষতিপূরণ হিসাবে আরও ৭৫ হাজার এবং আইনি পরিষেবার খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকাও দিতে হবে বিমা সংস্থাকে।

আপ্পা রাওয়ের স্ত্রী তুলসী দেবী এবং দুই মেয়ে মাভুরু উষারানি ও মাভুরু আরতির করা মামলায় রাজ্য ক্রেতাসুরক্ষা ফোরামের নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বিশাল না-হলেও এই নির্দেশের নজির বড় একটা নেই বলেই জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। আদালতে মামলাকারীর তরফে জানানো হয়, ২০০৭-এর অক্টোবরে বাড়ির সামনেই রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় আপ্পা রাওয়ের। সে দিন বন্ধুদের সঙ্গে একটি পার্টিতে যোগ দিতে কলকাতায় গিয়েছিলেন তিনি।

ফেরার সময়ে রাস্তায় অচৈতন্য অবস্থায় মেলে আপ্পা রাওকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। জগদ্দল থানায় খবর যায়। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বিষের প্রভাবে আপ্পা রাওয়ের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে জানানো হয়।

Consumer Court: স্বামীর মৃত্যুতে বিমার টাকায় না, ক্রেতা সুরক্ষার নির্দেশে সুদ-আসল দুই পাবেন উপভোক্তা
যদিও তা ফরেন্সিক পরীক্ষার অপেক্ষায় ছিলেন তদন্তকারীরা। সেই চূড়ান্ত রিপোর্ট আসতেও গড়িয়ে যায় অনেকগুলো বছর। শেষমেশ ব্যারাকপুর বিএন বোস হাসপাতালের বিশেষজ্ঞের দেওয়া চূড়ান্ত ফরেন্সিক রিপোর্ট-সহ ২০১৫-এর অক্টোবরে ব্যারাকপুর সিজেএম আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেয় পুলিশ। তাতে বলা হয়, আপ্পা রাওয়ের মৃত্যু হয়েছে বিষের প্রভাবেই।

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমাসংস্থার কাছ থেকে আপ্পা রাও পার্সোনাল অ্যাক্সিডেন্ট ইনশিওর‍্যান্স পলিসি করিয়েছিলেন ২০০৪-এ। তার মেয়াদ ছিল পনেরো বছরের। তাই তাঁর অপমৃত্যুর পরে পরিবার বিমা কোম্পানির কাছ থেকে তাঁদের প্রাপ্য টাকা চেয়ে আবেদন করেন। সমস্যা তৈরি হয় সেখানেই। অভিযোগ, বিমা সংস্থা বারবারই পরিবারের আবেদন খারিজ করে। ২০১৬-তে শেষবারের মতো তুলসী দেবীদের আর্জি খারিজ হওয়ার পরে তাঁরা ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন।

Life Insurance Corporation : দাবিহীন টাকা মেটাবে এলআইসি
বিমা সংস্থার তরফ থেকে আদালতে যুক্তি দেওয়া হয়, যেহেতু বিষের প্রভাবে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, তাই আপ্পা রাও আত্মহত্যা করেছেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। সেটা বিমার আওতায় আসে না। নিম্ন আদালতও এই যুক্তিতে সায় দেয়। যদিও রাজ্য ফোরাম স্পষ্ট জানিয়েছে, বিষের প্রভাবে মৃত্যুর কথা বলা হলেও পুলিশের ফাইনাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি কী ভাবে বিষ তাঁর শরীরে গেল।

সে ক্ষেত্রে খুনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এবং সেটা বিমার আওতায় অবশ্যই আসতে পারে। জাতীয় ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের রায় উল্লেখ করে রাজ্য ফোরাম জানিয়েছে, মৃত্যুর ক্ষেত্রে এ রকম ধোঁয়াশা থাকলে বিমার গ্রাহকের দিক থেকেই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *