অন্যান্য বছরের মতো আবারও হাজির ৩১ অক্টোবর, ছেলেটির ১৮ তম জন্মদিন। আবদার মতো হাজির মামা। বাবাও এনেছে মিষ্টি। শুধু যার জন্য এই আয়োজন আজ সে ওই রজনীগন্ধার মালায় মোড়া একটা ছোট্ট ফ্রেমে বন্দি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা বাংলা অনার্সের ছাত্র বগুলার ছেলেটি চির নাবালকই রয়ে গেল। সাবালকত্বের অধিকার পাওয়ার এত পরিকল্পনা সব শেষ হয়ে গিয়েছে ১০ অগাস্ট রাতে। র্যাগিং নামক এক জান্তব পৈশাচিক সংস্কৃতির বলি সে।
ছেলের ১৮তম জন্মদিনে নতুন করে শুকোচ্ছে না মায়ের চোখের জল। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘১৮ বছরের জন্মদিন নিয়ে ওর সব থেকে বেশি উৎসাহ ছিল ভোটার কার্ডের জন্য নাম তুলবে। আমি ওই কাজ করি বলে আমাকে পই পই করে বলে রেখেছিল। মা ওই দিনই ফিল আপ করব। আমার কানে খালি বাজছে সেসব কথা।’ শুধু তাই নয়, বরাবরে মেধাবী ছেলেটি উচ্চমাধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট করার পর মায়ের কাছে সবাইকে ডেকে খাওয়ানোর আবদার করেছিল। মা কথা দিয়েছিলেন, একেবারে ১৮ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে ৩১ অক্টোবর বন্ধু বান্ধব সবাইকে ডেকে খাওয়াবেন। এক স্বপ্নের দিন এল, কিন্ত সেই দিনের মাসখানেক আগেই শেষ বগুলার এই বাবা মায়ের প্রাণের দীপ। কত আশা, কত আনন্দ, এক উজ্জ্বল স্বপ্নের পরিসমাপ্তি।
নিশ্চুপ ভাই। মনে পড়ছে বারবার দাদার শেষ আর্তি। দাদার ১৮ তম জন্মদিনে এখন আশ্রয় বলতে শুধুই স্মৃতি। হস্টেল যাওয়ার আগে ভাইয়ের জন্মদিনেও অনেক মজা করেছিল ছেলেটি। মাকে মাংস রান্নায় সাহায্য থেকে কেক কেটে ভাইকে ফোমে ভরিয়ে দেওয়া। দাদার জন্মদিনে পালটা কেক মাখিয়ে আনন্দের বদলাটা নেওয়া হল না ভাইয়ের।
থামছে না বাবারও হাহাকার। তাঁর দাবি, এই ঘটনার পরেও কিছুই বদলায়নি। আরও অনেক বাবা-মাকেও হয়তো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অপদার্থতার জন্য এমন শোক পেতে হতে পারে। হ্যাপি বার্থডে গানের বদলে চোখের জলে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ আর্তনাদ মাথা খুঁড়ে মরছে বগুলার বাড়িতে। অসময়ে নিভে যাওয়া এক উজ্জ্বল দীপের বাবা মা হিসেব তাদের একটাই প্রার্থনা, দোষীদের এমন সাজা হোক যাতে কেউ র্যাগিংয়ের নামও মুখে আনতে কাঁপে।