পূর্বসূরী অশোক মিত্রর থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর শূন্য ঘাটতি বাজেট পেশ করার জেরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন, আবার সেই তিনিই প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক পরিষদের সদস্য হিসেবে পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এমনকী বর্তমানে দেশে যে GST চালু রয়েছে, তারও একপ্রকার স্রষ্টা ছিলেন বাম আমলের এই ‘কৌটিল্য’। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত।
গত শতকে পশ্চিমবঙ্গে বাম সরকার আসারও এক দশক পরে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন অসীম দাশগুপ্ত। তারপর থেকে বাম জমানার শেষ পর্যন্ত সামলেছেন অর্থ দফতরের দায়িত্ব। এমনকী আবগারি দফতরের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। নিজের কার্যকালে রাজ্য তথা জাতীয়স্তরে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এই প্রাক্তনী।
দলের কাজে এখনও যুক্ত
সেই ছাত্র জীবন থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অসীম দাশগুপ্ত। ১৯৮০ সালে যোগ দেন সিপিএম-এ। তারপর থেকে দীর্ঘদিনের পাবলিক লাইফ। এখনও অবশ্য সেই অভ্যাস বন্ধ হয়নি। বয়স হলেও যুক্ত রয়েছেন দলের সঙ্গে। এক টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে এই সময় ডিজিটালের তরফে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেমন আছেন? জবাবে অসীম বলেন, ‘মোটামুটি, বয়স তো হচ্ছে, আনুসঙ্গিক সমস্যাও আছে।’ তবে বয়স হলেও, দলের কর্মসূচি বা মিটিং-এ এখনও যোগ দেন বলেই জানান অসীম। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, সদ্য জন্মদিন গিয়েছে অসীম দাশগুপ্তর। তাঁর অনুগামীরা বলেন, অসীম এখন ৭৮-এর ‘যুবক’।
অর্থনীতির ‘এ টু জেড’ নখদর্পনে
অর্থনীতির ছাত্রই শুধু নয়, অসীম দাশগুপ্ত অর্থনীতির শিক্ষকও। দীর্ঘদিন কলেজে পড়িয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়েও নিয়েছেন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজ্যগুলিতে ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা VAT প্রবর্তনের ক্ষেত্রেও তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। কাজ করেছেন রাজ্য পরিকল্পনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে। এছাড়া ১৯৯৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সমস্ত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় সরকারে এমপাওয়ারমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনিই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থনীতির ‘এ টু জেড’ তাঁর নখদর্পনে।
রাজ্যের অর্থনীতি নিয়ে ‘স্পিকটি নট’
কিন্তু এহেন অসীম দাশগুপ্তই রাজ্যের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘স্পিকটি নট’। এই সময় ডিজিটালের তরফে তাঁকে বঙ্গের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর সাফ জবাব, ‘আমি এখনই কিছু বলতে পারবো না। দল বলতে বললে বলি, তা না হলে বলি না।’ এমনকী সিঙ্গুর নিয়ে সাম্প্রতিককালে রাজ্য সরকারকে টাটাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে নির্দেশ এসেছে সেই বিষয়েও কিছু বলতে চাইলেন না তিনি।
আর অসীমবাবুর এহেন অবস্থান থেকেই বিভিন্নমহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, রাজ্যে বাম সরকারের পতনের নেপথ্যে যে সিঙ্গুর আন্দোলন অন্যতম শক্তি হিসেবে ভূমিকা নিয়েছিল, সেই সিঙ্গুর ইস্যুতে এতবড় রায়ের পরেও কেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি চুপ? কেনই বা এখনও দলীয়ভাবে কোনও বিবৃতি প্রকাশ করল না সিপিএম?