Burdwan News,’গডম্যানে’র নিদান: দুষ্টু ছেলেকে হাঁটু পর্যন্ত পুঁতে রাখলেন খোদ বাবা-মা – parents buried the naughty boy at damodar pasture up to his knees after godman says


এই সময়, বর্ধমান: এ যেন রিয়েল লাইফের স্বঘোষিত ‘গডম্যান’ রাম রহিম বা রিল লাইফের ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’-এর সেই সাধুবাবার গল্পের মতো! রিল ও রিয়েল, দু’টি ঘটনারই খানিক মিল পাওয়া যেতে পারে পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানা এলাকার নতু পঞ্চায়েতের শিয়ালিতে।

সেখানে স্বঘোষিত এক বাবার নিদানে ৯ বছরের ছেলেকে দামোদরের চরে হাঁটু পর্যন্ত পুঁতে রেখে এসেছিলেন তারই বাবা-মা। ‘গডম্যান’, অর্থাৎ শিয়ালি আশ্রমের বাবাজি শিশুটির বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন, চঞ্চল ছেলের মতি ফেরাতে তাকে দামোদরের চরে ফেলে রেখে বলতে হবে, ‘তোর যে দিকে চোখ যাবে চলে যাবি।’ আর রাতের অন্ধকারে শিশুটির বাবা-মা বাবাজির নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন।

সেই একরত্তি ছেলে বড়ই দুরন্ত। তাকে বাগ মানাতে ব্যর্থ বাবা-মা শরণাপন্ন হন আশ্রমের বাবাজির। তারপর ছেলেকে পথে আনতে এমনই নিদান হাঁকেন তিনি। গত ৩১ তারিখ রাতে রায়না থানার পুলিশের কাছে খবর আসে, শিয়ালি গ্রামে দামোদরের চরে কাঁদতে দেখা গিয়েছে একটি শিশুকে। পুলিশের টহলদারি ভ্যান এলাকায় গিয়ে উদ্ধার করে তাকে।

পুলিশকে শিশুটি জানায়, সেখানে তাকে ফেলে দিয়ে গিয়েছে তার বাবা, মা ও দাদু। এক সাধুর কথামতো তাকে হাঁটু পর্যন্ত বালি খুঁড়ে পুঁতে দিয়ে সবাই ফিরে গিয়েছে আশ্রমে। যাওয়ার সময়ে বাবা বলে গিয়েছে, ‘তোর যে দিকে চোখ যাবে চলে যাবি।’ রাতেই পুলিশ শিশুটিকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তার খাবারের ব্যবস্থা করে পুলিশ হানা দেয় শিয়ালি আশ্রমে।

পুলিশ গিয়ে দেখে, আশ্রমের চারধারে কারাগারের মতো উঁচু পাঁচিল। বড় কারখানার মতো লোহার গেট। সেই গেট বন্ধ থাকায় আশ্রম কর্তৃপক্ষকে খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানায় পুলিশ। ঘণ্টাখানেক বাদে খোলা হয় গেট। তার পরেও ওই বাবাজির দর্শন পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় পুলিশকে। ৪০ মিনিটের প্রতীক্ষার পরে বাবাজি পুলিশকে জানান, তিনি যা করেছেন তা শিশুটির ভালোর জন্যই এবং অভিভাবকদের অনুরোধে।

Baruipur News : স্ত্রীকে হত্যার পর মাথা ন্যাড়া করে আত্মগোপন, বিফলে কুবুদ্ধি! পুলিশের জালে অভিযুক্ত স্বামী
আশ্রমে থাকা শিশুটির মা সুস্মিতা বিশ্বাসকে বুঝিয়ে থানায় আনে পুলিশ। ১ নভেম্বর বুধবার সকালে পুলিশ সুস্মিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জানা যায়, নদিয়ার চাকদহ থানার নরেন্দ্রপল্লি কদমতলায় তাঁদের বাড়ি। শিয়ালি আশ্রমের মহারাজের নির্দেশেই তাঁরা ছেলেকে দামোদরের চরে হাঁটু পর্যন্ত বালিতে পুঁতে দিয়ে আসেন। সুস্মিতার স্বামী অর্কদ্যুতি বিশ্বাস ও বাবা সুব্রত জোয়ারদারও ছিলেন আশ্রমে। কিন্তু পুলিশ দেখে তাঁরা পালিয়ে যান।

ওই দিন বর্ধমান চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে শিশুটিকে তুলে দেয় পুলিশ। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যরা শিশুটি ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন, আশ্রমের মহারাজের কথায় তাঁরা মোহগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ছেলেটিকে তাঁদের হাতে তুলে দিলে ফের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এর পরেই শিশুটিকে সিঙ্গুরের সরকারি হোমে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। তদন্তকারী এক অফিসার জানিয়েছেন, ৯ বছরের শিশুটি যথেষ্ট মেধাবী। তার স্মৃতিশক্তিরও প্রশংসা করেন ওই পুলিশ আধিকারিক।

শিশুটির বাবা, মা, দাদুর বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে। মামলা দায়ের হয়েছে ওই আশ্রমের বিরুদ্ধেও। সুস্মিতার থেকে অর্কদ্যুতির মোবাইল নম্বর নেন তদন্তকারীরা। এরপর টাওয়ার লোকেশন ধরে বুধবার রাতে শক্তিগড় থেকে অর্কদ্যুতি ও সুব্রতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় সুস্মিতাকেও।

Birbhum News : সিউড়িতে নৃশংস খুনের কিনারা, আসানসোল থেকে গ্রেফতার ‘স্টোনম্যান’
বৃহস্পতিবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে তিন জনকে পেশ করে পুলিশ অর্কদ্যুতিকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায়। বিচারক অর্কদ্যুতির তিন দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন। মা ও দাদুকে পাঠানো হয়েছে জেল হেফাজতে। জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পরবর্তী তদন্তে যাঁদের নাম আসবে, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ওই বাবাজির আশ্রমের সকলেই পলাতক। গোটা আশ্রমে তালা ঝুলছে। স্থানীয় বাসিন্দা অপর্ণা সাহা বলেন, ‘আশ্রমে ভালো কাজ হতো না। ভালো কাজ হলে সবসময়ে গেট কেন বন্ধ থাকবে? এলাকার লোক সাধুবাবা সম্পর্কে কিছু জানল না, সেখানে বাইরের লোকেদের এত ভক্তি? বহু মহিলাও থাকতেন আশ্রমে।’ আশ্রমের আড়ালে মহিলা পাচারের কোনও চক্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজি বলেন, ‘আশ্রমের এক সাধুবাবার নির্দেশে বাবা-মা তাঁদের ন’বছরের ছেলেকে কী ভাবে দামোদরের চরে ফেলে রেখে এল, তা ভেবে অবাক হচ্ছি। একটি বাচ্চা চঞ্চল বলে এ ভাবে তাকে রেখে চলে আসবে! এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে স্থানীয় পঞ্চায়েতকে নিয়ে আমাদের লড়াই করতে হবে। আইন আইনের মতো কাজ করবে। পুলিশ তদন্ত করছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *