‘মাই নেম ইজ খান, অ্যান্ড আই অ্যাম নট আ টেররিস্ট’! ইউএসএ-তে টুইন টাওয়ারে হামলার প্রেক্ষিতে এক বাবার সন্তানের মৃত্যুর জন্য লড়াইয়ের কাহিনী উঠে এসেছিল ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিতে। একজন অটিস্টিক মানুষ হিসেবে রিজওয়ান খানের সেই একার লড়াইয়ে চোখ ভিজে গিয়েছিল বহু দর্শকের। রিজওয়ান খানের চরিত্রে ছিলেন খোদ শাহরুখ খান।
মুক্তির এক দশকেরও বেশি সময় পরে বৃহস্পতিবার সেই ছবি প্রদর্শন করা হলো প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তাও আবার শাহরুখে ৫৮ তম জন্মদিনে। একাধিকবার ছবিটি দেখার পরেও এ দিন যে ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসের ইউনিয়ন রুমে আরও একবার এই ছবি ভিড় করে দেখলেন, তাঁদের বক্তব্য, ‘দেশে ক্রমবর্ধমান ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং সাম্প্রদায়িকতার পরিবেশের বিরুদ্ধে এই উদ্যোগ তাঁদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। যার মুখ শাহরুখ খান।’
প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছে নানা ফিল্ম ক্লাব, প্রকাশিত হয়েছে ফিল্ম ম্যাগাজিন, বসেছে আলোচনাচক্রও। কিন্তু তাতে এতকাল মূলত ব্যতিক্রমী ও সাহসী ছবি নিয়েই আলোচনা হওয়ার রেওয়াজ ছিল। সেই কারণে কখনও গোদার, কখনও জাফর পানাহি কখনও আবার ঋত্বিক, সত্যজিত অথবা মৃণাল সেনের মধ্যেই ঘোরাফেরা করত চর্চা।
জনপ্রিয় এবং মেন স্ট্রিম ছবির প্রদর্শন এবং তা নিয়ে আলোচনা ছিল খানিকটা ব্রাত্যই। কিন্তু কী এমন হলে যে সেই তথাকথিত কৌলিন্য ভাঙতে হলো? এই উদ্যোগের অন্যতম আয়োজক দেবনীল পাল জানান, ২০১৯ সালে যখন এনআরসি, সিএএ আন্দোলন চলছে সারা দেশ জুড়ে এবং তার পালটা হিসেবে শাহরুখ খানকে হিন্দুত্ববাদীরা ক্রমাগত আক্রমণের রাস্তায় হাঁটছেন, দেশ ছেড়ে পাকিস্তান চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে তাঁরা একটি ফ্যান ক্লাব তৈরি করেন।
যা এতদিন কেবল নায়কের জন্মদিনে কেক কেটে হইচই করেই কাটিয়েছে। কিন্তু এই প্রথম ক্যাম্পাসে শাহরুখের অভিনীত একটি সিনেমা দেখানোর প্রয়োজন মনে করলেন তাঁরা। প্রেসিডেন্সির ছাত্রী দেবপ্রিয়া অধিকারীর কথায়, ‘গত কয়েক বছরে কী চলেছে শাহরুখের উপর, বাবাকে না পেরে এমনকী ছেলেকে পর্যন্ত টার্গেট করা হয়েছে।’ পড়ুয়া বিতান ইসলামের কথায়, ‘ যে সেকুলার, বহুত্ববাদী ভারতের কথা শাহরুখ বলেন বা কাজের মাধ্যমে করে দেখান তাকে উদযাপন করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’
ফিল্ম সমালোচক অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ‘গত কয়েক বছরে যে মানুষগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে শাহরুখকে টার্গেট করা হয়েছে, সেটাই হয়তো ওঁকে প্রতিবাদের মুখ করে তুলেছে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘এমন একজন আইকনকে তুলে এনে নিজেদের রাজনৈতিক বক্তব্যকে তুলে ধরা অবশ্যই প্রতিবাদের ভাষায় একটা বড় পরিবর্তন।’
যাদবপুরের ছাত্র, শাহরুখ ফ্যান তথা অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের সংযোজন, ‘জওয়ান ছবিতে শাহরুখ যে সাহসী কথাগুলো বলেছেন, তাতে তিনি প্রতিবাদের মুখ যদি হয়ে ওঠেন কোনও আপত্তি দেখি না।’