ইডেনে প্রায় ৬৭ হাজার দর্শকাসন রয়েছে। বর্তমানে সিএবির সদস্য সংখ্যা ১১ হাজারের কিছু বেশি। অভিযোগ, এদের মধ্যে মাত্র ৩ হাজার সদস্য টিকিট পেয়েছেন। তাহলে বাকি টিকিট কোথায় গেল, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শনিবার দিনভর স্টেক হোল্ডার ‘বুক মাই শো’ এবং সিএবি কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন গোয়েন্দারা। যদিও ধোঁয়াশা পুরোপুরি কাটেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, দু’পক্ষ নিজেদের মতো করে যুক্তি দিলেও ৬৪ হাজার টিকিটের সহজ হিসেব কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না। এরমধ্যে অন্তত ২০ হাজার টিকিট ইস্যু করা নিয়ে পুলিশ কর্তাদের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। লালবাজারের দাবি, সেগুলি আদতে কমপ্লিমেন্টারি টিকিট। যা কার্যত ফ্রি-তে দেওয়া হয়।
বিশ্বকাপের টিকিট ইস্যু নিয়ে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে নোটিস দিয়ে শনিবার ময়দান থানায় তলব করা হয়েছিল। তিনি সেখানে না গেলেও লালবাজারে গিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করেন। আধঘণ্টা ধরে দু’জনের মধ্যে কথা হয়। পরে স্নেহাশিস বলেন, ‘বিষয়টি ঠিক হয়ে গিয়েছে। সমস্যা নেই।’
এদিকে, টিকিটের হাহাকার নিয়ে মুখ খুলেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘মানুষ টিকিট কিনে বাইরে কী করছে, কে ধরবে? আমি দেখেছি, বিশ্বকাপ ফুটবলের টিকিট ১৭ লক্ষ টাকায় বিক্রি হতে। ইন্ডিয়া ফাইনালে খেললে ১ লক্ষ ২০ হাজার দর্শকাসনের স্টেডিয়ামও ছোট লাগবে। এটাই ডিমান্ড। সিএবি তো মহামেডান মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে নেই। একমাত্র পুলিশই পারে কন্ট্রোল করতে।’
লালবাজার সূত্রের দাবি, টিকিটের কালোবাজারির অভিযোগে ইতিমধ্যেই কলকাতায় ৯টি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ২১ জন। তদন্তে উঠে এসেছে, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের জন্য যে ৬৪ হাজার টিকিট ইস্যু করা হয়েছিল, তার মধ্যে ‘বুক মাই শো’-কে অনলাইনে বিক্রির জন্য দেওয়া হয় ১৮ হাজার ৭৫টি টিকিট। এখান থেকেই এজেন্টদের সঙ্গে কারসাজি করে টিকিট বুকিং-এ জালিয়াতি করা হয়েছে কি না, তা জানতে শনিবার সংস্থার দুই কর্তাকে ময়দান থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদিনই আবার মুম্বই থেকে এসে সংস্থার ডিজিএম (অপারেশন) উজ্জ্বল হালদারও থানায় হাজিরা দিয়েছেন। রাত পর্যন্ত চলছে জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া।
এসবের পাশাপাশি সিএবির দুই পদস্থ কর্তা নরেশ ওঝা এবং বিশ্বপতি সেনগুপ্তের কাছ থেকেও এদিন টিকিট সংক্রান্ত নথি চেয়ে পাঠিয়েছিল ময়দান থানা। পুলিশকে জমা দেওয়া সিএবি কর্তাদের সেই নথি থেকে জানা গিয়েছে, এই ম্যাচের জন্য বিসিসিআইকে ২০ হাজার ১৬৮টি কমপ্লিমেন্টারি টিকিট দিয়েছিল আইসিসি। সেই টিকিট পরে সিএবি-র কাছে যায়। এ ছাড়াও সিএবি আলাদা করে অফলাইনে বিক্রির জন্য পায় আরও ২৫ হাজার ৯৭৫টি টিকিট। এই টিকিটগুলি রাজ্যের বিভিন্ন জেলার রেজিস্টার্ড ক্লাবগুলোকে বিক্রি করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘বুক মাই শো’-র থেকেও বেশি সংখ্যায় আসা কমপ্লিমেন্টারি টিকিটগুলি তাহলে গেল কোথায়, কারা ওগুলো পেলেন, সেই টিকিটই ঘুরপথে কালোবাজারি হয়নি তো?
ইতিমধ্যেই সিএবি সদস্যদের একাংশ টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি পুলিশেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। যেমন, গার্ডেনরিচের বাসিন্দা প্রসাদ খান। তিনি ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন, তাঁর লাইফ মেম্বারশিপ রয়েছে। কিন্তু টিকিট পাননি। তাঁর কথায়, ‘প্রতি বছর টিকিট পেলেও এবার কেন এমন হলো তা বুঝতে পারছি না। আমাকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
প্রসাদের এই অভিযোগের ভিত্তিতে সিএবি পুলিশকে জানিয়েছে, তারা যে ম্যাচ পরিচালনা করে তার টিকিট লাইফ মেম্বারদের দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু বিশ্বকাপ আইসিসি পরিচালিত। ফলে প্রত্যেককে দেওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, যেখানে সদস্যরাই টিকিট পাচ্ছেন না, তা হলে সাধারণ দর্শক কোথা থেকে টিকিট পাবেন? এদিনই টিকিট নিয়ে কালোবাজির প্রতিবাদে সিএবি-র দেওয়া চারটি টিকিট ফিরিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
টিকিট নিয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘তদন্ত চলছে। টিকিটের ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে সিএবির পাশাপাশি বিসিসিআই-ও কলকাতা পুলিশের নজরে রয়েছে।’