Biriyani,১ টাকায় চপ-শিঙাড়া! ৩০ টাকায় বিরিয়ানি, কোথায় পাবেন জানেন? – alu chop singara only 1 rupes and biriyani only 30 rupes know where to get


এই সময়: ভাবা যায়? মাত্র ১ টাকায় সুস্বাদু চপ। এমনকী শিঙাড়াও। আর বিরিয়ানি? তারও দাম মাত্র ৩০ টাকা। নদিয়ার রানাঘাটের হরিদাস বা বীরভূমের সিউড়ির দিলীপ দে এখনও এক টাকায় চপ বিক্রি করেন। আলুর দাম ৩০ টাকা হোক বা ২০ টাকা, রিফাইন তেলের দাম দোড়শো ছাড়ালেও ১ টাকাতেই চপ বিক্রি করেন দু’জনে। এক দু’বছর নয়, টানা ২৫ বছর।

নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের শিবনিবাসে এখনও পাওয়া যায় এক টাকার শিঙাড়া। বয়স ৮৫ পার তবু মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এক টাকাতেই শিঙাড়া বিক্রি করার পণ করেছেন গোপাল রায়। তাঁর কথায়, ‘আর যে ক’বছর বাঁচব, দাম বাড়াব না। আগে বিভিন্ন সময়ে চার আনা, আট আনা দামে শিঙাড়া বিক্রি করেছি। এখন ১ টাকা।’

তমলুকে আগে কলকাতার মতো বিরিয়ানির ক্রেজ ছিল না। এখন শহরের প্রাচীন হ্যামিলটন স্কুলের আশপাশে ঝালমুড়ি, ঘুগনির দোকানের পাশে ৪টি বিরিয়ানির দোকান হয়েছে। সবাই গড়ে ১০০ টাকায় ফুল প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি করেন। অভিজিৎ পালও তাই করতেন। মাস তিনেক আগে কুক-এর পরামর্শে মাত্র ৩০ টাকায় বিরিয়ানি বিক্রি করা শুরু করেছেন তিনি। আর্থিক ক্ষতি করে নয়, রেসিপি এক রেখে পরিমাণে কম দিয়ে সার্ভ করেন ‘স্টুডেন্টস বিরিয়ানি’।

কী ভাবে কম দামে দিচ্ছেন? রেস্টুরেন্টের মালিক অভিজিৎ বলেন, ‘স্কুলের পাশেই আমাদের দোকান। ফেব্রুয়ারি মাসে যখন শুরু করি তখন ৮০ টাকা ও ১০০ টাকায় ফুল প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি করতাম। আমরা দেখলাম, সকলের পক্ষে বিরিয়ানি খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষত স্কুলের বাচ্চাদের। সেই কারণে কুকের পরামর্শে স্বাদ-গন্ধ ঠিক রেখে পরিমাণ কমিয়ে ৩০ টাকা দাম করেছি। প্রথমে ২০-৩০ প্লেট বিক্রি হতো। স্টুডেন্টস বিরিয়ানি চালুর পরে বিক্রি বেড়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ প্লেট হয়েছে। ওই প্লেটে ৫০ গ্রাম রাইস, একটা আলু, ৫০ গ্রামের চিকেন কষা থাকছে।’

হরিদাসের ‘বুলবুল ভাজা’র মতো রানাঘাটের হরিদাস দাস নিজেই তেলেভাজার ব্রান্ড। পুরসভা এলাকা ঘেঁষা আনুলিয়া পঞ্চায়েতের সুকান্ত পল্লিতে তাঁর দোকান। পাকা নয়, টিনের চালার ছোট্ট ঝুপড়ি। দোকানের সামনে ক্রেতাদের ভিড় জমে গেলে কড়াইয়ের গরম তেলে হাত ডুবিয়ে চপ তুলে ভেলকিও দেখান তিনি।

নিজস্ব রেসিপি তো আছেই, গরম তেলে হাত ডুবিয়ে কড়াই থেকে চপ তোলাটাও খদ্দের ধরার একটা কৌশল হরিদাসের। ঘড়ির পেন্ডুলামের ঢঙে শরীর দুলিয়ে কড়াইয়ে চপ ছাড়তে ছাড়তে হরি বলেন, ‘ফোস্কা একদমই পড়ে না। গরম তেলে হাত দেওয়াটা অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।’

প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় দোকান খোলেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে হাত লাগিয়েও রোজ হিমশিম খান খদ্দের সামলাতে। কম দামে বিক্রি করে কী ভাবে লাভ করেন? একটু থমকে ঘুরিয়ে উত্তর দিলেন হরিদাস। তিনি বলেন, ‘এই তেলেভাজা দোকানের আয় থেকেই ৩ কাঠা জমিতে থাকা টালির চালের বাড়ি ভেঙে সেখানে দোতলা পাকাবাড়ি তৈরি করেছি। এ বছর জানুয়ারিতে ভালো খরচ করে মেয়ের বিয়েও দিয়েছি।’

Kolkata Street Food : বিকোচ্ছে বাসি মোমো! মিষ্টিতে সিন্থেটিক কালার, উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর
হাসতে হাসতে হরিদাস এখন বলেন, ‘বাজার খারাপ থাকলেও হাজার পাঁচেক টাকার তেলেভাজা বিক্রি হয়।’ তাঁর ছেলে শিবম কলেজে পড়েন।গান-বাজনা তাঁর প্রিয়। ব্যান্ডের দলেও যুক্ত। শিবমের উপলব্ধি, ‘তেলেভাজা সত্যিই একটা শিল্প। বাবাও বড় শিল্পী।’ তেল-আলু-মশলার দাম বাড়লেও বছরের পর বছর মাত্র ১ টাকাতেই চপ বিক্রি করেন বীরভূমের সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের কোমা গ্রামের দিলীপ দে।

প্রতিদিন গড়ে ১২ কেজি আলুর চপ তৈরি করেন তিনি। এত অল্প দামে চপ বিক্রি করেন কীভাবে? দিলীপবাবু বলেন, ‘লাভ করাটা বড় কথা নয়, আমার লক্ষ্য মানুষকে খাওয়ানো। মায়ের ইচ্ছাতেই এই সিদ্ধান্ত। মা-ই আমাকে ১ টাকায় চপ বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মা জীবিত না থাকলেও তাঁর কথা রাখতে এখনও ১ টাকাতেই চপ বিক্রি করছি।’

Bengal Fish: মাছে ভাতে বাঙালির পাতে প্রথম পছন্দ কোনটি? রাজ্যের দৈনিক চাহিদা জানলে চমকে উঠবেন!
প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা, বিকাল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা। শুধু এলাকার বাসিন্দারা নন, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকেও অনেকে তাঁর কাছে চপ কিনতে আসেন। ১ টাকায় চপ বিক্রি করতে কেন বলেছিলেন মা? প্রশ্ন শুনে দিলীপের চোখে জল। তিনি বলেন, ‘আপনারা শহরের মানুষ কষ্ট বুঝবেন না। আপনাদের কাছে ১০ টাকার কোনও মূল্য নেই।

গ্রামের মানুষ ৫ টাকার চপ আর ৫ টাকার মুড়ি খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেন। ২৫ বছর ধরে মায়ের আদেশ পালন করছি। মরার আগেও তাই করব।’ (তথ্য গৌতম ধোনি ও হেমাভ সেনগুপ্ত)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *