মাত্র আট বছর বয়সে কালীপুজো করবে বলে ঠিক করেছিল পবিত্র ঘোষ। বস্তির মধ্যে একচিলতে ঘর। রেললাইনের পাশে ওই বস্তিতে দিনরাত ট্রেনের যাতায়াত। রাস্তার ধারেও পুজো করা সম্ভব নয়। শেষে নিজের ওই ছোট্ট ঘরে পুজো করবে বলে ঠিক করে কিশোর পবিত্র। নিজেই কালী ঠাকুরের মূর্তি গড়ে মন্ত্রপাঠ করে পুজো শুরু করে। সেই পুজোর আজ পাঁচ বছর পূর্ণ হলো।
মধ্যমগ্রাম পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের চণ্ডীগড়ের হরিশনগর গেটের পাশ দিয়ে গিয়েছে রেল লাইন। সেখানেই বাড়ি পবিত্রদের। এখন পবিত্রর বয়স ১৩। পবিত্রর হাতে গড়া প্রতিমা ও মন্ত্র উচ্চারণ করে পুজো দেখতে ভিড় করেন রেলবস্তির বড় থেকে ছোটরা। পবিত্রর বাবা লক্ষ্মণ ঘোষ দিনমজুরের কাজ করেন। মা দীপিকা লোকের বাড়ি রান্নার কাজ করেন।
মেরেকেটে ১০০ স্কোয়ার ফিটেরও কম চারদিকে টিন দিয়ে ঘেরা একচিলতে একটা ঘরেই রান্না, খাওয়া, পবিত্রর পড়াশোনা। দিনের বেলায় টিউশন, স্কুল করে সময় হয় না। তাই রাতের বেলায় একা একা ওই এক চিলতে ঘরে বসে লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে কালী ঠাকুর গড়েছে পবিত্র। আগে রাস্তার ধার খুঁড়ে কিংবা এলাকার বাড়ি তৈরির জন্য ভিত কাটার মাটি নিয়ে আসতেন পবিত্রর মা।
এ বছর দীপিকা প্রথম ৬০ টাকার মাটি কিনে ঠাকুর গড়ার জন্য ছেলের হাতে তুলে দিয়েছেন। রং থেকে অন্য জিনিসপত্র কেনার জন্য দীপিকাই তাঁর উপার্জন থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে রাখেন। একমনে কালী ঠাকুর গড়ছে কিশোর। ঠাকুরের উচ্চতা প্রায় এক ফুট। মাটির কাজ প্রায় শেষ। বাকি শুধু রং করা আর মাকে কাপড় পরানো। মাথায় মুকুটও বসবে একটি। ছোট্ট হাত দিয়েই মন ভরে কালী ঠাকুরকে সাজায় পবিত্র।
তার কথায়, ‘পুজোর আগে মোবাইল থেকে পুজোর মন্ত্র লিখে রাখি। পুজোর সময় নিজের মতো করে মন্ত্রপাঠ করে পুজো করি। পুরোহিতদের মতো হয়তো মন্ত্রপাঠ করতে পারি না। কিন্তু মন দিয়ে মাকে পুজো করি।’ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই কালী মূর্তি তৈরি করে পবিত্র।
অভাবী কিশোর বলে, ‘আমাদের বড় বাড়ি নেই। এই একটি ঘরে একটি খাট রয়েছে। সেই খাটের তলায় মূর্তি বানাতাম। কিন্তু এ বার এক পাশে একটু জায়গা বের করে সেখানেই মূর্তি তৈরি করছি।’ পাশের বাড়ি এক কাকুর জন্য মালা গেঁথে টাকা পেয়েছিল পবিত্র। সেই ১০৭ টাকা ঠাকুরের পুজোর জন্য রেখে দিয়েছিল সে।
পবিত্রর মা দীপিকা বলেন, ‘ছেলের এই ভাবনায় সত্যিই আমরা অবাক। পুজোর কয়েক মাস আগে কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে রাখি। সেই জমানো টাকা দিয়ে মায়ের পুজো হয়। কালীপুজোর দিন সকাল থেকে মন্ত্র মুখস্থ করে ছেলে। আমি শুধু ভোগ রান্না করে ফল কেটে দিই। আমি চাই ছেলে নিজের পায়ে দাঁড়াক।’