রামমন্দিরের পালটা ফ্যাসিবাদ-বিরোধী সম্মেলন। অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের আগে দেশজুড়ে হিন্দুত্বের জিগির তুলতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তার মোকাবিলায় আগামী ২২ জানুয়ারি, যে দিন রামমন্দির উদ্বোধনের কথা, সে দিনই কলকাতায় আয়োজিত হতে চলেছে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী মহাসম্মেলন। জানুয়ারির ২২, ২৩ এবং ২৪ তারিখ–তিন দিন ধরে চলবে কর্মসূচি।
মূল অনুষ্ঠানটি হবে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। বাকি অনুষ্ঠানগুলি কলেজ স্কোয়ারের আশপাশে। শহরের বিভিন্ন সভাগৃহে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী সেমিনারের আয়োজন করা হবে। সব মিলিয়ে ২০০টি গণসংগঠন এই কর্মসূচিতে অংশ নেবে। উদ্যোক্তাদের দাবি, পুরো কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যানারে।
যার অগ্রভাবে থাকবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, লেখিকা অরুন্ধতী রায়, সমাজকর্মী মেধা পাটকরের মতো বুদ্ধিজীবীরা।
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রাজনৈতিক ব্যানার ছেড়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরাও ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনে সামিল হবেন।
এই কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা ন্যাশনাল হকার ফেডারেশনের নেতা শক্তিমান ঘোষ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনে কলকাতা বরাবরই দেশকে পথ দেখিয়েছে। সে ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসন হোক বা প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের দখলদারি। এ সবের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ অতীতেও প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। রামমন্দির উদ্বোধন ঘিরে গেরুয়া শিবির যে ভাবে দেশজুড়ে হিন্দুত্বের জিগির তৈরি করতে চাইছে, তাতে আমরা ফ্যাসিবাদেরই পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে মানুষকে জাগ্রত করতেই রামমন্দির উদ্বোধনের দিনই কলকাতায় ফ্যাসিবাদ-বিরোধী সম্মেলনের আয়োজন করছি। সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবেন।’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির অন্যতম তুরুপের তাস হতে চলেছে রামমন্দির উদ্বোধন। এটাকে নিজেদের সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে মরিয়া সঙ্ঘ-শিবির। দেশজুড়ে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিজেপি-সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজেপির কয়েক লক্ষ কর্মকর্তা এবং সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা রামমন্দির উদ্বোধনের দিন অযোধ্যায় উপস্থিত থাকবেন। স্পেশাল ট্রেনে তাঁদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।
বিজেপির রাজ্য শাখা আলাদা ভাবে দিনটি পালন করবে। রামমন্দির উদ্বোধনের দৃশ্য মানুষকে দেখাতে বসবে জায়ান্ট স্ক্রিন। তারই প্রাক-প্রস্তুতিতে রামমন্দিরের আদলে তৈরি সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দুর্গাপুজোর মণ্ডপ উদ্বোধন করতে কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পুজোর দিনগুলিতে বিজেপি নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছিল সেখানে। রামমন্দির উদ্বোধনের পর হিন্দুত্বের এই উন্মাদনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক মহলের।
তার মোকাবিলাতেই কলকাতায় ফ্যাসিবাদ-বিরোধী মহাসম্মেলনের আয়োজন। এ ব্যাপারে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘মৌলবাদী শক্তি এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও অস্মিতা-বিরোধী শক্তিকে সংগঠিত করে ভোটে ফয়দা তুলতেই এই ধরনের কর্মসূচি। এ সব করে তৃণমূলের কোনও রাজনৈতিক ফয়দা হবে না। সত্যিটা কী, মানুষ জেনে গিয়েছেন।’
তৃণমূল নেতা তাপস রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘বর্তমানে কেন্দ্রে যারা ক্ষমতায় রয়েছে, তারা ভারতের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, পরম্পরা কিছুই মানে না। এরা বিভাজনের রাজনীতি করে। এদের ফ্যাসিবাদি শক্তি ছাড়া আর কীই বা বলা যায়? এদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন।’