তাঁরা গিয়ে দেখেন, একতলার সদর ফটকের তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই আবাসনের বাসিন্দাদের সংগঠনের সচিবকে সর্তক করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে পুলিশ। কিছুক্ষণ চুপচাপ। তার পর আবার প্রবল শব্দে বাজি ফাটানো শুরু হয় ওই আবাসনেই। রাজ্যে শব্দবাজির মাত্রা এ বার আচমকা ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে। অর্থাৎ, অনুমোদন দেওয়া হয়েছে শব্দবাজিকে।
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ওই নির্দেশিকা জারি করা ইস্তকই পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা ছিল, কলকাতা এবং লাগোয়া বিধাননগরে শব্দবাজির তাণ্ডব গত কয়েক বছরের কালীপুজোকে ছাপিয়ে যাবে। সেই আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, সেটা মালুম হয়েছে রবিবার সকাল থেকেই। বোতল থেকে শব্দদৈত্য বেরিয়ে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বাজি ফাটানোর সময়সীমা রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা।
কিন্তু সেই নির্দেশ কলকাতা ও আশপাশের বহু জায়গাতেই মানা হয়নি। পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’র কলকাতার প্রধান কন্ট্রোল রুমে এ দিন সন্ধে ৭টা থেকেই ঘনঘন ফোন আসতে শুরু করে। ‘সবুজ মঞ্চ’র তরফে নব দত্তর বক্তব্য, ‘অন্যান্য বছর শহরে বাজির তাণ্ডব থাকলেও অন্তত হাসপাতাল চত্বরে এমন বাজির তাণ্ডব শুনিনি।’
পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বাজিতে এ বার শব্দযন্ত্রণা ও বায়ু দূষণ দুই-ই হয়েছে।’ বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানোর তালিকায় সোমবার রাতে শীর্ষে ছিল বাঙুর এলাকা এবং সল্টলেকের বিএফ, সিএফ, ইই, এফডি, এডি ব্লক। ৯ জনকে আটক করেছে বিধাননগর পুলিশ। প্রত্যেকেই আবাসনের বাসিন্দা।
লেক টাউন, বাঙুর, বরাহনগর, কেষ্টপুর, বাগুইআটি, এয়ারপোর্ট ২ ও আড়াই নম্বর গেট, ইএম বাইপাস লাগোয়া দক্ষিণ শহরতলির টেগোর পার্ক, আনন্দপুর, কালিকাপুর, মুকুন্দপুর, ভিআইপি বাজার এলাকা থেকে বাজির তাণ্ডবের অভিযোগ এসেছে ভূরি ভূরি। ৮০ শতাংশ অভিযোগেই বলা হয়েছে, বহুতল আবাসনের ছাদে দেদার শব্দবাজি ফাটছে।
পরিবেশবিজ্ঞানী অদিতি চক্রবর্তী মনে করেন, ‘শব্দবাজির ক্ষতিকারক দিকগুলো কী, তা নিয়ে সচেতনতা না-বাড়ালে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।’