ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা- এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে আজ সারা বাংলাজুড়ে পালিত হচ্ছে ভাইফোঁটা উৎসব। ঘরে ঘরে ভাই-বোনেদের সৌভ্রাতৃত্বের চিত্র। এরই মাঝে এক অন্য ছবি ধরা পরল উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় অবস্থিত সূর্যদয় মূক ও বধির হোমে। রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতর পরিচালিত ভাইফোঁটা উৎসবের আয়োজন মুখরিত হয়ে উঠল সকলে।
জানা গিয়েছে, এই হোমে বর্তমানে আবাসিকের সংখ্যা ২৬। যার মধ্য ১৫ জন বালক ও ১১ জন বালিকা। এরা কেউ কথা বলতে পারেনা ও কানে শুনতে পায় না। সারা বছর পরিবার থেকে অনেক দূরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে নিয়েই দিন কাটে তাঁদের। হোমের চার দেওয়ালে বদ্ধ জীবনের মাঝে প্রতিবছর একটা দিন তাঁরা মনখুলে আনন্দ করে। সেটি হল ভাইফোঁটা উৎসব। আবাসিকদের অনেকের পরিবার বলতে কেউই নেই, কারও আবার থেকেও নেই।
ভাইফোঁটা উৎসবে চারিদিকে যখন মঙ্গল ধ্বনির মধ্যে দিয়ে ঘরে ঘরে ভাইদের মঙ্গল কামনায় ব্রতী দিদি ও বোনেরা, তখন তারাই বা বাদ যায় কেন। তাই হোম কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বালক আবাসনে ভাইফোঁটা উৎসবের আয়োজন করা হয়। যেখানে সকাল সকাল সেজেগুজে হোমের মেয়েরা আবাসিক ভাইদের কপালে ফোঁটা একে দীর্ঘায়ু কামনা করে। চলে মিষ্টিমুখ। ভাইরাও দিদি বা বোনেদের থকে ফোঁটা পেয়ে বেজায় খুশী।
হোমের আধিকারিক পার্থ সারথী দাস জানান, প্রতিবছরই মানবিক দিক থেকে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ছেলে-মেয়েরা উৎসবে অংশ নিয়ে বেশ উৎসাহিত। সকাল সকাল আবাসিক বোনেরা স্নান সেরে বালক আবাসনে এসে ভাইদের ফোঁটা দিয়েছে। যার জেরে তাদের মধ্যে আরও সুদৃঢ় হয়েছে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন। তবে ভাইফোঁটা উৎসব উপলক্ষে এদিন হোমের মেনুতেও স্পেশালিটি লক্ষ্য করা যায়। রয়েছে মাছ, মাংস, ভাত, চাটনি, বোদে, নিমকি, নাড়ু আরও কত কি! অন্যদিকে, এই উৎসবে অংশ নিয়ে কতটা আনন্দলাভ করেছে তা আধো আধো ভাষায় ব্যক্ত করেছে হোমের আবাসিক বোনেরা।