Online Delivery : বাইক ছেড়ে ডেলিভারি সাইকেলে! বাড়ছে ট্রেন্ড – e commerce delivery persons in kolkata starts delivering goods door to door by bi cycle know reasons


প্রসেনজিৎ বেরা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর রোমে রুজিরুটির সংস্থান করতে একটি বাইসাইকেল আমজনতার জীবনে কতটা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল তা ‘বাইকেল থিবস’ ছবিতে দুনিয়াকে দেখিয়েছেন ইতালীয় চলচ্চিত্রকার ভিত্তিরিও ডি সিকা। সেই সাইকেল চুরি হয়ে গেলে কাজ হারানোর আশঙ্কা কী ভাবে ছাপোষা আন্তনিও রিচিকে গ্রাস করেছিল, তা এই নিও রিয়ালিস্ট ছবিতে দেখেছে সারা পৃথিবী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সেই আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি সারা দুনিয়াতেই বদলে গিয়েছে বহু দশক আগে। অটোনমাস ভেহিক্যাল থেকে ইভি-র এই যুগে শতাব্দীপ্রচীন বাই-সাইকেল কি মিলেনিয়ালদের রুটিরুজি সংস্থানের বাহন হয়ে উঠছে? ই-কমার্স ডেলিভারি পার্সেনদের মধ্যে ক্রমেই সাইকেলে করে জিনিস পৌঁছে দেওয়ার প্রবণতা এই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে।

এই ফেস্টিভ মরশুমে সাইকেলে করে ই-কমার্স ডেলিভারি পার্সনরা খাবার থেকে বৈদ্যুতিন গ্যাজেট বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন, এই দৃশ্য অনেকের চোখে পড়েছে। সল্টলেক অঞ্চলে ইন্দ্রজিৎ দাস পাঁচ-ছ’বছর ধরে একটি জনপ্রিয় ফুড অ্যাগ্রিগেটর সংস্থার ডেলিভারির কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ‘এই পেশায় এসে ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে ২০১৯ সালে বাইক কিনেছিলাম। সেই সময়ে দিনে ৮-১০ ঘণ্টা কাজ করলে হাজার বারোশো টাকা আয় হতো। কিন্তু ২০২১ সালে দেখলাম আমার বাইক ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিলোমিটার দৌড়েছে। ফলে ফের নতুন বাইক কিনতে হয়েছিল। এখন দিনে ১০ ঘণ্টা কাজ করেও পাঁচশো টাকা আয় করা কঠিন। তাই কয়েক বছর কাজ করার পর বাইকের ইঞ্জিন ঝাঁঝরা হয়ে গেলেও ইএমআই মিটিয়ে নতুন বাইকে কেনা সম্ভব নয়। অনেকেই তাই বাইকে ছেড়ে বাইসাইকেলে ডেলিভারি দেওয়া শুরু করেছে।’

ফুড অ্যাগ্রিগেটর সংস্থায় যাঁরা বাইকার ডেলিভারি পার্সন, তাঁদের এক সময়ে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে খাবার পৌঁছে দিতে হতো। এখন তাঁদের এরিয়া আনলিমিটেড হয়ে গিয়েছে। সেখানে ই-কমার্স সংস্থাগুলি সাইকেল আরোহী ডেলিভারি পার্সন নিয়োগ করছে। যাঁদের ৬-৮ কিলোমিটারের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। বৃহৎ একটি ই-কমার্স সংস্থার ডেলিভারি পার্সন সোহেল খানের কথায়, ‘সাইকেলে যাঁরা ডেলিভারি দিচ্ছেন, তাঁদের কয়েক ঘণ্টার একটি স্লটে ৪০-৫০ টাকার বেশি আয় হয় না। কিন্তু তেল-মোবিলের খরচ নেই। বাইকের মেনটেন্যান্সের খরচ নেই। শুধু মোবাইল রিচার্জ ও টিফিনের খরচ। তাই বাইকের বদলে বাই-সাইকেল ব্যবহারের ঝোঁক বাড়ছে।’

ই-কমার্স ডেলিভারি পার্সনদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া গিগ ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সৌভিক ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, ‘কাস্টমারের সংখ্যা, ডিমান্ড বাড়ায় ই-কমার্স সংস্থাগুলি একটি জ়োনকে ছোট ছোট মাউক্রো এরিয়াতে ভাগ করছে। বাইকারদের বদলে সাইকেলধারীদের এই ছোট এলাকায় ব্যবহার করছে। সাইকেলের ব্যবহার বাড়ছে।’ গত এক দেড় বছরে জনপ্রিয় হওয়া একটি ডেলিভারি অ্যাগ্রিগেটর সংস্থায় নিউ গড়িয়া অঞ্চলে কাজ করছেন তন্ময় নস্কর। আলু-পটল থেকে লিপস্টিক দ্রুত কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দেয় এই ই-কমার্স সংস্থা। সাইকেল চালিয়েই তন্ময় অর্ডার ডেলিভারি করেন। আর্টসে গ্র্যাজুয়েশন করা এই যুবকের কথায়, ‘মাসছয়েক এই কাজ করছি। বাইকের তুলনায় সাইকেলে একটু বেশি সময় লাগে কিন্তু আমার খরচ কম হয়। নিউ গড়িয়া, পঞ্চসায়র, নয়াবাদ অঞ্চলে ছয়-সাত কিলোমিটারের মধ্যে ডেলিভারি দিতে হয়।’

Bike Tips : কার্বুরেটরের থেকে কোথায় আলাদা ফুয়েল ইনজেকটেড? বাইকে এই ইঞ্জিন থাকলে জেনে নিন
ই-কমার্সের হাত ধরে সাইকেলের এই প্রত্যাবর্তন নিয়ে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারে বক্তব্য, ‘পেট্রোপণ্যের দাম যে ভাবে বেড়েছে সেখানে ডেলিভারি পার্সনদের মধ্যে সাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। ই-কমার্স সংস্থাগুলির কাছেও এটা লাভজনক হতে পারে। সাইকেল পরিবেশবান্ধব। পশ্চিমী দেশ থেকে কমিউনিস্ট চিনেও সাইকেলের বহুল ব্যবহার হয়। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে নোবেল লরিয়েট সাইকেল চালান।

Upcoming Bikes : পালসার থেকে রয়্যাল এনফিল্ড! এই 5 বাইক কিছুদিনের মধ্যে লঞ্চ হবে বাজারে
এই পরিবর্তন তাই কিছুটা ইতিবাচক।’ সাইকেলের ব্যবহার বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছে ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’ নামে একটি সংগঠন। সাড়ে ন’হাজার সদস্য রয়েছেন। এই সংগঠনের আহ্বায়ক রঘু জানার বক্তব্য, ‘মহিলারাও সাইকেলে করে ডেলিভারি দিচ্ছেন। কাঁকুড়াগাছি সাইকেল আরোহী ডেলিভারি পার্সনরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন দেখি। এটা শহরের দূষণ কমাবে। কলকাতায় প্রচুর অলিগলি রয়েছে। তাই সাইকেলে ডেলিভারি দেওয়া কঠিন নয়। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এই ট্রেন্ড।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *