রেশন থেকে চুরি যাওয়া গম কাদের কাছে যাচ্ছে, তার হদিশ পেতে রাজ্যজুড়ে অভিযানে নামছে খাদ্যদপ্তর। খোলা বাজারে রেশনের গম বিক্রি করছে কারা, তাদেরও খুঁজে বের করতে আটাকল, হোলসেলার, পাইকারি ব্যবসায়ী, মুদি-দোকানি এমনকী চাকিকলেও হানা দিতে খাদ্য দপ্তরের বিশেষ পরিদর্শক দল। স্টকে যে পরিমাণ গম থাকার কথা, তার থেকে বেশি পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এসেন্সিয়াল কমোডিটিজ় অ্যাক্ট-এ থানায় মামলা রুজু করা হবে। ধরা পড়লে বাতিল হবে লাইসেন্স। জেল-জরিমানাও হতে পারে। কয়েক দিন আগেই রাজ্য খাদ্য দপ্তরের তরফে এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রের খাদ্য দপ্তরও আলাদা করে অভিযানে নামছে।
রেশন দুর্নীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় গোটা রাজ্য। এই ঘটনায় ইডি’র হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। তার মধ্যেই খাদ্য দপ্তর আলাদা করে অনুসন্ধানে নামার পরিকল্পনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা মনে করছেন, ঠিকঠাক অনুসন্ধান করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, রেশন দুর্নীতির জাল কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। খাদ্য দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘রেশন দুর্নীতিতে শুধু বাকিবুর একা জড়িত নন, খুঁজলে আরও এরকম অনেক ব্যবসায়ীর খোঁজ পাওয়া যাবে। এর সঙ্গে যেমন ফ্লাওয়ার মিল মালিকদের একাংশ জড়িত রয়েছেন, তেমনি অনেক ব্যবসায়ী রেশনের গম বেশি দামে খোলা বাজারে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা অর্জন করেছেন।’
খাদ্য দপ্তর সূত্রের খবর, যাঁরা খোলা বাজারে গম বিক্রি করেন অথবা যে সব আটাকল মালিক গম ভাঙিয়ে আটা তৈরি করেন, তাঁরা মূলত ওপেন মার্কেট সেলস স্কিমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে গম পেয়ে থাকেন। তাঁদের কাছে কতটা পরিমাণ গম মজুত রয়েছে, প্রতি মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে (হুইট সেল লিমিট) হিসাব দিতে হয়। কিন্তু অনেকেই সেই নিয়ম মানছেন না বলে অভিযোগ।
ওপেন মার্কেট সেলস স্কিমে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে যতটা গম পান, তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণ গম তাঁরা খোলা বাজারে বিক্রি করছেন এবং এই স্কিমে যাঁরা গম কেনেন না, তাঁরাও অনেকে গমের ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে, সেই গম তাঁরা কোথা থেকে পাচ্ছেন? আশঙ্কা করা হচ্ছে, রেশনের জন্য সরকার যে গম বরাদ্দ করছে তার একটা অংশ হাত ঘুরে ব্যবসারদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
কারা এই অসাধু কাজের সঙ্গে যুক্ত, সেটা গমের স্টক মেলালেই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা। এর জন্য সমস্ত জায়গায় ইনস্পেকশন টিম পাঠাতে বলা হয়েছে ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোলার ও ডেপুটি ডিরেক্টরদের (রেশনিং)। সেই মতো তাঁদের রিপোর্ট পাঠাতে হবে খাদ্য দপ্তরের কাছে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ ইনস্পেকশনের কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে। কারা কেন্দ্রীয় পোর্টালে এখনও নাম তোলেননি, সেটাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।