কিন্তু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে মালা পরানোর খেসারত কম দিতে হয়নি বুধনি মেঝানকে। এই খবর বুধনির নিজের গ্রাম তদানীন্তন মানভূম জেলার খেরবনাতে পৌঁছে যায়। ২০ বছরের এক তরুণী নেহরুর গলায় মালা পরিয়েছেন এবং পাল্টা সেই মালা নেহরু তাঁকে পরিয়ে দেওয়ার খবরে বুধনিকে সমাজচ্যুত করা হয়। তাঁকে আর গ্রামে ফিরতে দেওয়া হয়নি। পুরুলিয়ার শালতোড়ে কাজের খোঁজে গিয়ে গ্রামছাড়া বুধনির পরিচয় হয় সুধীর দত্ত নামে এক ব্যক্তির। পরে সুধীর তাঁকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়।
মাইথনের বাসিন্দা ডিভিসির অবসরপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ সিনহা জানান, সামাজিক কারণে ঘর ছাড়তে হয়েছিল ওঁকে। একবার ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রাক্তন সাংসদ সুরজ মণ্ডল বুধনি মেঝানকে নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন। জানিয়েছিলেন, এমন এক মহিলার জন্য ডিভিসির কিছু করা উচিত। বলেন, ‘যতদূর আমি শুনেছি, আসানসোলের সাংসদ আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় রাজীব গান্ধীর কাছে তাঁকে নিয়ে গিয়ে পুরো ঘটনা বলেছিলেন। লিখিতভাবে আবেদনে তাঁকে ডিভিসিতে চাকরি দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত রাজীব গান্ধীর নির্দেশেই ডিভিসি কর্তৃপক্ষ তাঁকে পাঞ্চেতে একটি স্থায়ী চাকরি দেন। সেখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়।’ ডিভিসির চেয়ারম্যানের কথায় তিনি একাধিকবার বুধনির বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলেন জানিয়ে ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘আমাকে উনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মালা দিয়ে তাঁর হাত ধরে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলাম বলে আমাকে ঘর ছাড়তে হয়েছিল।’
শনিবার বুধনি মেঝানের শেষ যাত্রায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার রাজ্য নেতা অশোক মণ্ডল, স্থানীয় বান্দা পঞ্চায়েতের প্রধান ভৈরব মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের কাছে বুধনি মেঝান ইতিহাস সৃষ্টিকারী মহিলা। আমাদের দাবি, তাঁর নামে এখানে একটি বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করুক ডিভিসি। সুধীর দত্তর মতো মানুষ তাঁকে আশ্রয় দিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন। শেষ সময়ে তাঁর কন্যা রত্না দত্ত যেভাবে মাকে দেখেছেন, তাতে তাঁদের সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’