লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে বাংলার মতুয়া অধ্যুষিত এলাকার বিজেপি নেতানেত্রীদের। কারণ, সিএএ নিয়ে কেন্দ্র কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের এই ‘রহস্যজনক নীরবতা’য় স্নায়ুচাপ বাড়ছে মতুয়া-এলাকার বিজেপি নেতৃত্বের। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে পাল্টা চাপে ফেলতে আবার মতুয়াদের একাংশ রাজ্য বিজেপি দপ্তরের বাইরে ধর্নায় বসার ভাবনাচিন্তাও শুরু করেছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে মোদী, শাহরাও একেবারে হাত গুটিয়ে বসে নেই। মতুয়াদের মতোই তাঁদের চিন্তায় রেখেছে পশ্চিমবঙ্গের গোর্খা, কামতাপুরী এবং আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক। সূত্রের খবর, গোর্খাদের সমর্থন আদায়ের জন্য দার্জিলিং কেন্দ্রে প্রার্থী বদলের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন শাহরা। কামতাপুরী-মন ছুঁতে বিজেপি বাংলা থেকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনের নেতা অনন্ত মহারাজকে। মতুয়াদের সমর্থন আদায়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করলেও তা এখনও কার্যকর করতে পারেনি বিজেপি। লোকসভা ভোটের মাস ছয়েক আগে সেটাও বিঁধে গেরুয়া শিবিরে।
সূত্রের খবর, রাজ্যের কোন আসনে হাওয়া কেমন, তা নিয়ে বঙ্গ-বিজেপি থেকে একাধিক রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও নিজেদের মতো করে সমীক্ষা চালিয়েছেন। দলের অন্দরের খবর, সে সব রিপোর্টের নির্যাস থেকে স্পষ্ট – মতুয়া প্রভাবিত লোকসভা আসনগুলিতে বিজেপির হাওয়া তেমন সুবিধের নয়। মতুয়া-ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে বেশ ক’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দফায় দফায় বনগাঁ, রানাঘাটে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। শান্তনু এবং জগন্নাথকেও বলা হয়েছে, মতুয়াদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে কেন্দ্রের আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছার কথা আরও ভালো ভাবে প্রচার করতে। তবে কবে সিএএ কার্যকর হবে, তা নিয়ে কোনও দিশা দেখানো হয়নি তাঁদের।
২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন, করোনা মিটলেই মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তারপর দু’বছর কেটে গিয়েছে। করোনার স্মৃতিও জনমানসে ম্লান হতে চলেছে। কিন্তু সিএএ-এর ‘রুল’ এখনও তৈরি করতে পারেনি মোদী সরকার।
বনগাঁর এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘লোকসভা ভোটের আগে মতুয়ারা নাগরিকত্ব না পেলে আমাদের বড়সড় খেসারত চোকাতে হবে।’ সিএএ-ইস্যুতে বনগাঁর সাংসদ শান্তনুকে একাধিকবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে। সিএএ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘সিএএ হওয়া উচিত। এটা বড় ইস্যু। বহু মানুষের আবেগ এবং স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত। রাজ্য সরকারেরও বিষয়টি সমর্থন করা উচিত।’
আর তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, মতুয়ারা সবাই এ দেশের নাগরিক। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে আবার দেওয়ার কথা বলছে। মানুষ এ সব বুঝে গিয়েছে। মতুয়ারা বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।’