কোন পথে এল পুরস্কার?
শান্তিনিকেতনের প্রান্তিক বাচ্চাদের জন্য এক বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন বীরভূমের জেলা শাসক বিধান রায়। তাঁর সেই পরিশ্রম জাতীয় স্তরে সম্মানিত করছে বীরভূম জেলাকে। স্কচ পুরস্কার পাচ্ছে বীরভূমের ‘আনন্দ পাঠ’। প্রত্যন্ত গ্রামে বাচ্চাগুলোর পড়াশোনার গুরুভার তুলে নিয়ে ছিলেন তিনি। স্কুল ছুট কমাতে এবং দুঃস্থ পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার আলো দেখাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়।
কী ভাবে যাত্রা শুরু?
করোনা কাল থেকে জেলার পিছিয়ে পড়া গ্রাম ও পাড়ার প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছিল । আর সেই অনীহা কাটাতেই ‘আনন্দপাঠ’ এর উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। যেখানে মুক্ত প্রকৃতিতে খেলার ছলে শিক্ষা দেওয়া। পাখির ডাক শুনে ছড়া বলা ও আকাশ তলে অংক কষা। ঠিক এই পন্থা অবলম্বন করেই স্কুল ছুট হওয়ার অভ্যাস আটকায় জেলা প্রশাসন। আর এই পন্থা যে শুধু স্কুল ছুট আটকেছে শুধু তাই নয় দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টেছে খুদে পড়ুয়াদের। যেখানে পড়াশোনা দেখেই কাঁদতে বসে যেত শিশুরা অথবা অমনোযোগী থাকতো, তাদেরও বেড়েছে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ এবং আগ্রহ।
জেলা শাসক কী বললেন?
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘এই পুরস্কার আমাদের সকলের মিলিত প্রয়াসের ফল। মূলত জেলার অপেক্ষাকৃত সামাজিক, অর্থনৈতিক,ভৌগোলিক সাংস্কৃতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সহায়তা করা এবং তাতে শিক্ষার বিস্তার স্বশক্তিকরণ করে মানব সম্পদের উন্নয়নের আমাদের লক্ষ্য ছিল।’ তাঁর কথায়, যদিও এটা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থার বিকল্প নয় এটা বিদ্যালয় শিক্ষার পরিপূরক। যার জন্য এই আনন্দপাঠ স্কুলে শিশুদের উপস্থিতির হার বেড়েছে , বেড়েছে তাদের সক্রিয়তা।
কী ভাবে হতো আনন্দ পাঠ?
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিউনিটি শিক্ষক গ্রামে গ্রামে গিয়ে পড়ানোর কাজ করতেন। সকাল ৭ থেকে ৯ টা এবং বিকেল ৪ থেকে ৬টা পর্যন্ত পড়ানোর দায়িত্ব নিতেন তিনি। এমনকি, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন। সাধারণ ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি, বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরাও যাতে শিক্ষার মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, সেই বিষয়টিও ভেবে দেখা হয় জেলা প্রশাসনের তরফে। তবে গতানুগতিক ক্লাস বা শ্রেণিভিত্তিক পড়াশোনা এই অনন্দ পাঠে হতো না। মূলত ছেলেমেয়েদের মানসিক স্তরের উপর ভিত্তি করেই বাচ্চাদের ক্লাস নেওয়া হতো। জেলাশাসকের সেই উদ্যোগ আজ বিস্তার লাভ করেছে জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই উদ্যোগের জন্যেই এল পুরস্কার।