কৃষ্ণনগরে নবমীতে সম্পন্ন হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। একইসঙ্গে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমীর পুজো হয় ওই দিনই। কৃষ্ণনগরের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রথা জগদ্ধাত্রী পুজোর ঘট বিসর্জন। দশমীতে সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর বিভিন্ন বারোয়ারি প্রথমে তাদের মঙ্গল ঘট বিসর্জন করে জলঙ্গী নদীতে। পুজো বারোয়ারি কমিটিগুলো পুজোর ঘট নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে নদীর দিকে এগিয়ে যান। এই শোভাযাত্রা দেখতেও রাস্তার দুধারে ভিড় জমান প্রচুর মানুষ। ঘট বিসর্জনের পর সন্ধ্যে থেকে শুরু হয় প্রতিমা নিরঞ্জন অর্থাৎ ভাসান। কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় সাং অর্থাৎ কাঁধে নিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের প্রথা রয়েছে।
এই সাং প্রথা কৃষ্ণনগরের অন্যতম ঐতিহ্য। করোনার সময় প্রশাসনের তরফে সাং প্রথায় বিধি নিষেধ জারি হলেও বিধিলঙ্ঘন করে সেবারও সাঙেই হয়েছিল কৃষ্ণনগরের নিরঞ্জন। ঠাকুর দেখতে সেবারও পথে নেমেছিলেন আট থেকে আশি। বিভিন্ন বারোয়ারী পুজো তাদের প্রতিমা বেহারাদের কাঁধে নিয়ে প্রথমে কৃষ্ণনগর রাজ বাড়ী স্পর্শ করে সোজা নিয়ে যান জলঙ্গি নদীতে। প্রথমে সমস্ত বারোয়ারি তাদের প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার পর একেবারে শেষে বিসর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যশালী বুড়িমাকে।
কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়া বারোয়ারির বুড়িমার দর্শন পেতে ভিড় জমান সিংহভাগ মানুষ। ভিড়ের কারণে পুজোর সময় অনেকেই যেতে পারেন না বুড়িমাকে দেখতে। এই শোভাযাত্রা থেকেই একসঙ্গে সমস্ত প্রতিমার সঙ্গে চাষাপাড়া বারোয়ারির বুড়িমারও দর্শন সেরে নেন দর্শকেরা। দূর থেকেই জানান মনস্কামনা। কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়া বারোয়ারির ঐতিহ্যবাহী বুড়িমাকে দর্শন করতে মণ্ডপেও নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল। এবছর বারো কেজির অলংকার দিয়ে বুড়িমার অঙ্গসজ্জা করা হয়েছে।
কৃষ্ণনগরের ঘট বিসর্জন ও প্রতিমা নিরঞ্জন যা দেখতে রাজ্যের বাইরে থেকেও অসংখ্য মানুষ উপস্থিত হয় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রর শহরে। জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে সমস্ত লজ ও হোটেল পরিপূর্ণ। কৃষ্ণনগরের তিল ধারণের জায়গা পর্যন্ত নেই। এমনকী কর্মসূত্রেও যারা থাকেন কৃষ্ণনগরের বাইরে, এই কদিনের জন্য জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য ফিরে আসেন শিকড়ের কাছে।