কাজ চাই, কাজ! হ্যাঁ, কাজের খোঁজ দেওয়ার নাম করে সাইবার অপরাধের সংখ্যা ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী বিধাননগরে। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় ১৩৫ জন সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল।
এসব ক্ষেত্রে মূলত অনলাইনে কিছু ভিডিয়ো লাইক করার মামুলি টাস্ক দিয়ে টাকা উপার্জনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তাতে একবার আবেদনকারী সহজে হাতে টাকা পেয়ে গেলেই তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করা সহজ হয়ে যায় প্রতারকদের পক্ষে। তারপরে অনলাইনে টাকা আমানত করে মোটা অঙ্কের সুদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় আবেদনকারীদের। তাতে সাড়া দিয়ে টাকা জমা দিলেই সেই টাকা হাপিশ! পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই ধরনের প্রতারণার সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন মূলত ৩৫-৪৫ বছর বয়সীরা।
এই ট্রেন্ডটাও নতুন বলে মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা। কারণ, ২০২২-য়ে বিধাননগরে সাইবার অপরাধের ট্রেন্ড অনুযায়ী, প্রতারিতদের ৭৬ শতাংশই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। অর্থাৎ প্রবীণ নাগরিকদের চেয়ে এখন তুলনায় কমবয়সীদের টার্গেট করছে অপরাধীরা। বিধানগর কমিশনারেট সূত্রে খবর, ২০২২ সালে প্রতারণা সংক্রান্ত ২০৪টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ (৭১) বোকা বনেছেন বাড়ির ছাদে মোবাইল টাওয়ার বসিয়ে টাকা রোজগারের আশায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া জীবনবিমা চালু করতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছিলেন ৬৫ জন।
বিদেশ থেকে দামি গিফট পাঠানোর নাম করে পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন ২৩ জন। চাকরি পাওয়ার আশায় টাকা দিয়ে ঠকেছেন ১৯ জন। বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় গত বছর যাঁরা প্রতারিত হয়েছিলেন তাঁদের ৭০ শতাংশ সল্টলেকের বাসিন্দা, ১৫ শতাংশ লেকটাউনের। ২০২০ থেকে ২০২২–এই দু’বছরে সাইবার অপরাধের ঘটনা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বিধাননগরে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০২০ সালে সবমিলিয়ে ১০২ জন মানুষ সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছিলেন বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায়। এ বছর সেপ্টেম্বর প্রথম সপ্তাহেই সংখ্যাটা ১৩৫। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তর পরামর্শ, ‘অপরাধীরা সাধারণত দুর্বলতাকে হাতিয়ার করে। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা লোভ। হঠাৎ বড়লোক হওয়ার ভাবনা ছাড়তে হবে। লোভে পড়ে কোনও জায়গায় বিনিয়োগ করবেন না বা অচেনা কাউকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করবেন না।’