Fever Coughing : তাপমাত্রার ওঠানামায় সক্রিয় ব্যাকটেরিয়া, ভোগান্তি সমানে – viral fever cold cough does not go away due to bacterial activation


এই সময়: কথায় বলে, ভাইরাল জ্বর-সর্দি-কাশি ডাক্তার দেখালে ৭ দিনে সারে। আর ডাক্তার না দেখালে এক সপ্তাহে! কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, অসুস্থতার সেই মেয়াদ ৭ দিন ছাড়িয়ে ১৪ দিন, এমনকী ২১ দিন হয়ে গেলেও কারও কারও সংক্রমণ সারছে না। চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেকের ক্ষেত্রেই সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে বদলে যাচ্ছে বলেই এমনটা হচ্ছে। হাসপাতালেও বাড়ছে ভিড়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দেড়-দু’ সপ্তাহ ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার দ্রুত ওঠা-পড়া তো আছেই, সেই সঙ্গে রয়েছে দিনের বেলার গরম আবহাওয়ার আচমকা সন্ধ্যা থেকে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। বেলা বাড়লে রোদের তেজে ঘাম হচ্ছে। অথচ সূর্য ডুবলেই গায়ে শিরশিরানি। এই আবহেই ব্যাকটেরিয়ারা সক্রিয় হয়ে উঠছে, লোকেও ভুগছে। পারার দ্রুত উত্থান-পতনে শরীরের ইমিউনিটি হয়ে পড়ছে ঢিলেঢালা। আর সেই ফাঁক গলেই ভাইরাল সংক্রমণে কাবু শরীরে সেঁধিয়ে যাচ্ছে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ক্রমেই বেড়েছে। গত ১৬ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনে-রাতের মধ্যে খুব বেশি ফারাক ছিল না তাপমাত্রায়। কিন্তু যত দিন গিয়েছে, দিন-রাতের তাপমাত্রার ফারাক ততই বেড়েছে। গত ২০ নভেম্বর, সোমবার সর্বোচ্চ (২৯) ও সর্বনিম্ন (২০.৮) তাপমাত্রার ফারাক ছিল ৮ ডিগ্রিরও বেশি। আবার গত তিন দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ওঠানামা দেখার মতো- সোমবার ২০ ডিগ্রির ঘরে তো মঙ্গলবার ২২ ডিগ্রির ঘরে, বুধবার ফের ২০ ডিগ্রির ঘরে।

তাপমাত্রার এই দ্রুত ওঠানামাতেই দুর্বল শরীরের ইমিউনিটি আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আর তাতেই বাড়াবাড়ি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘এসি-ফ্রিজ-গিজারের মতো শরীরেও থাকে থার্মোস্ট্যাট। সব সময়ে তা শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ধরে রাখতে চায়। মুশকিল হলো, আচমকা বাইরের তাপমাত্রায় বাড়াবাড়ি বদল হলে শরীরের থার্মোস্ট্যাট যথাযথ কাজ করে না। তখনই ইমিনউনিটি তার কর্তব্যে গাফিলতি করে ফেলে। এতেই ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ মাথাচাড়া দিয়েছে শহরে।’

অসুস্থদের মধ্যে বড় অংশেরই ভাইরাল সংক্রমণ হয়েছে আগে। কিন্তু পুরোপুরি সেরে ওঠার আগেই ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের হানায় আরও কাবু হয়ে পড়ছে শরীর। অপরিণত ইমিউনিটি এবং কমজোর ইমিউনিটির কারণে অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই বেশি। অনেকেরই সাধারণ শ্বাসনালীর সংক্রমণ ফের ব্যাকটেরিয়ার কবলে ফুসফুসের সংক্রমণে বদলে যাচ্ছে। হচ্ছে নিউমোনিয়ার মতো কঠিন ব্যাধিও। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা যাচ্ছে এই ছবি। মণিপাল হাসপাতালের অধিকর্তা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এই মুহূর্তে তিন জন ভাইরাল ও দু’জন ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি।’

ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রোহিত কাপুর জানাচ্ছেন, ভাইরাল সংক্রমণ সারতে না সারতেই শিশুরাও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভাইরাল সংক্রমণ হলে নাকে ডিকনজেস্ট্যান্ট ড্রপ ব্যবহার করা উচিত। না হলে নাক বুজে থাকে। আর অনেক সময়েই এতে নাক ও কানের সংযোগকারী ইউস্টেশিয়ান টিউব ব্লক হয়ে গিয়ে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্ম দেয়। এতে কান ও সাইনাসের পাশাপাশি অনেক সময়ে ফুসফুসেও সংক্রমণ ছড়ায়।’

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সেই সংক্রমণের বাড়াবাড়ি হলে হাসপাতাল ছাড়া গতি নেই। আনন্দপুর ফর্টিস হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহা জানাচ্ছেন, এই রকম ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে অন্তত তিন জন তাঁর কাছে চিকিৎসাধীন। ওই হাসপাতালেরই চিফ নার্সিং অফিসার ডলি বিশ্বাস জানাচ্ছেন, তিন জন বয়স্কও নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি তাঁদের হাসপাতালে। দু’জনের সংক্রমণ ভাইরাল, এক জনের ব্যাকটেরিয়াল। মেডিকা হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রচুর সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হচ্ছে। এই মুহূর্তে ২০ জন ভাইরাল নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *